রাখাইন রাজ্যে প্রস্তাবিত ‘মানবিক করিডোর’ ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। এক বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, এই করিডোরের মাধ্যমে দেশের ভৌগোলিক স্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও আত্মঘাতী বলে আখ্যা দেন।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হানিফ বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য সরাসরি হুমকি। ইতিহাস সাক্ষী, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানবিক করিডোরের ব্যর্থতা প্রমাণিত। আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কঙ্গো, সিরিয়া বা ইউক্রেন—কোনো ক্ষেত্রেই এই পন্থা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মিয়ানমারে সমুদ্রবন্দর থাকা সত্ত্বেও ত্রাণ পাঠাতে কেন বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে? অন্তর্বর্তী সরকার কোন প্রক্রিয়ায় এবং কিসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।”
মাহবুবউল আলম হানিফের আশঙ্কা, এই করিডোরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ একটি নতুন প্রক্সি যুদ্ধের মাঠে পরিণত হতে পারে। কারণ ওই অঞ্চলটিতে ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলোর স্বার্থ জড়িত।
“এই তথাকথিত মানবিক করিডোর ব্যবহার করে আরাকান আর্মিকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক হুমকি,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “মানবিক করিডোর সাধারণত শরণার্থীদের সহায়তার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মিয়ানমারে কোনো শরণার্থী শিবির নেই, বরং রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাহলে মিয়ানমারে ত্রাণ পাঠানোর যৌক্তিকতাই বা কোথায়?”
এই পরিস্থিতিকে বাংলাদেশে ‘মানচিত্র বিপর্যয়ের’ সম্ভাবনা হিসেবে চিহ্নিত করে হানিফ বলেন, “যদি আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সামরিক জান্তা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের কেন্দ্রে বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়ে, তাহলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।”
তিনি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান, যেন জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সময়োচিত এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই ‘হঠকারী ও আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।