।। আমিনুল হক।।
ডঃ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকার আওয়মীলীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। কথিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মেটিক্যুলাস ডিজাইনের অংশীদার নবগঠিত কিংস পার্টি জাতীয় নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশের অস্তিত্যে বিশ্বাস না করা যুদ্ধাপরাধী দল জামাতে ইসলাম এবং মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর সাজানো দাবির প্রেক্ষিতে ডঃ ইউনুসের সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসকল গোষ্ঠীর প্ররোচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো নিশ্চিতভাবেই তারা দেশের ১ শতাংশ জনগণেরও প্রতিনিধিত্ব করে না। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছিল তাতে সাধারণ কোন মানুষের উপস্থিতি ছিলো না। একটা সাজানো আন্দোলনের মাধ্যমে এই দেশের জন্ম দেয়া দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা কতটুকু আত্মঘাতী সেটা বুঝতে এদের বেশি সময় লাগবে না।
ডঃ ইউনুসের বর্তমান অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘এনজিওগ্রাম’ সরকার বলা যায়। সারাজীবন বিদেশীদের তাবেদারী করা, বিদেশী পাসপোর্ট ধারী ধামাধরা লোকদের দিয়ে ডঃ ইউনুস তার সরকার সাজিয়েছেন। এই সরকারের অংশীদারদের স্বভাবতই কোন রাজনীতির পাঠ নেই, দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কোন সুস্পষ্ট ধারণা নেই। মাটির সাথে নেই এদের কোন সংযোগ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পালস এরা পড়তে জানে না। এরা এসেছে নিজেদের আখের গুছাতে। গত নয় মাসে তাদের কার্যক্রমই এটা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে। নিজেদের অপশাসনে দেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা, দেশের সার্বভৌমত্ব যখন হুমকির মুখে, দেশে যখন মৌলবাদী গোষ্ঠীর করাতলে যাবার অপেক্ষায় তখন আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের এই ঘোষণা নিজেদের জন্য কিছুটা অতিরিক্ত সময় বের করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই কাগুজে নিষিদ্ধের ঘোষণায় আওয়ামীলীগের কিছুই আসে যায় না।
শুধুমাত্র অজ্ঞ ও অর্বাচীনরাই ভাবতে পারে নিষিদ্ধের কাগুজে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করা যাবে, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দমিয়ে রাখা সম্ভব হবে। আওয়ামীলীগকে যদি নিষিদ্ধ করে থামানো যেত, তাহলে এই দেশেরই জম্ম হতো না। এই দেশের জন্ম দিয়েছে আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ না থাকলে বাংলাদেশ হতো না। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে আওয়ামীলীগের সংগ্রাম্, আত্মত্যাগ এবং বিজয়ের আখ্যান। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র যতদিন থাকবে ততদিন থাকবে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ, থাকবে এই দেশের কোটি মানুষের মনের মণিকোঠায়। আওয়ামীলীগ ফিরে আসবে ফিনিক্স পাখির মতো, ধ্বংসস্তূপ থেকে গর্জে উঠে রচনা করবে অপূর্ব বিজয়গাঁথা। সেটা করবে এ দেশের আপামর জনগণকে সাথে নিয়েই, যেমনটা আগেও করেছে।
মনে রাখতে হবে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা ক্যান্টনমেন্টের আশীর্বাদ নিয়ে গড়ে উঠা কোন দল নয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে। সেটা তৎকালীন পাকিস্তানের শোষক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই। সেখান থেকে ১৯৫৫ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামীলীগের যাত্রা। এরপরের ইতিহাস সংগ্রামের, গৌরবের এবং বিজয়ের। কিন্তু পথটা মসৃণ ছিল না। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে আওয়ামীলীগ সহ সকল রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। তাতে আওয়ামীলীগকে থামানো যায়নি। বরং আওয়ামীলীগের হাত ধরেই ১৯৬৬ সালে আসে এদেশের মুক্তির সনদ ‘ছয় দফা’ দাবি। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধু সহ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের উপর জেলে জুলুম চালিয়েও রুখে দেয়া যায়নি আওয়ামীলীগের অগ্রযাত্রা।
১৯৭০ এর নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী করে জনগণই জানিয়ে দেয় তাদের সিদ্ধান্ত, আওয়ামীলীগই তাদের দল, বঙ্গবন্ধুই তাদের নেতা। মানূষের মুখে একটাই শ্লোগান তখন, এক নেতার এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। জনগণের সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী আমাদের উপর চাপিয়ে দিল এক অসম যুদ্ধ। নেমে এলো ২৫শের ভয়াল কালোরাত। নিষিদ্ধ হলো আওয়ামীলীগ, গ্রেফতার হলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই বাঙালি জাতিকে সাথে নিয়ে রচনা করলো এই গৌরবজ্বল বিজয় উপাখ্যান। স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। সেটাও আওয়ামীলীগের হাত ধরেই।
১৯৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার পর পুনরায় অঘোষিত ভাবে নিষিদ্ধ হয় আওয়ামীলীগ। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের শাসনামলেও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার নির্যাতন অব্যাহত ছিলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ঘুরে দাড়িয়েছে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে শাসন ক্ষমতায়। সেই বঙ্গবন্ধু কন্যাকেও হত্যার কম চেষ্টা করা হয়নি। ১৯৮১ সালের দেশের ফেরার পর থেকে ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলা পর্যন্ত অন্তত একুশ বার হত্যার করার চেষ্টা করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। লক্ষ্য ছিলো একটাই। আওয়ামীলীগকে নেতৃত্বশূন্য করা, নিশ্চিহ্ন করা। কিন্তু প্রতিবারই মানবঢাল হয়ে তাকে রক্ষা করেছে তাঁর নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। ১/১১ এর সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারই চেষ্টা করেছিলো কথিত ‘সংস্কার’ এবং ‘মাইনাস টু’ ফর্মূলার নামে আওয়ামীলীগকে দমিয়ে রাখতে। সেই চেষ্টাও সফল হয়নি। সকল ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে আওয়ামীলীগ ফিরেছে স্বমহিমায়।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়না। যদি নিত তাহলে যে ভুল আইয়ুব কিংবা ইয়াহিয়া করেছিলো সেই একই ভুল ডঃ ইউনুস করতেন না। আওয়ামীলীগ কে নিষিদ্ধ করার ধৃষ্টতা দেখাতেন না। আওয়ামীলীগ মিশে আছে এদেশের মাটি মানুষের সাথে, আওয়ামীলীগ মিশে আছে এদেশের ধুলোকনায়। আওয়ামীলিগের গৌরবগাঁথা ছড়িয়ে আছে এদেশের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে। বরং যারাই আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছে, ধ্বংস করতে চেয়েছে, তারাই নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে। এদেশের মানুষই তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। নিশ্চিত থাকুন আওয়ামীলীগ ফিরবে তার স্বমহিমায়। আওয়ামীলীগ ফিরবে শেখ হাসিনার হাত ধরে, এদেশের মানুষকে সাথে নিয়েই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।