বুধবার (১৪ মে) ভারতের বিরুদ্ধে অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুসে অংশ নেওয়া সেনাদের সঙ্গে দেখা করতে শিয়ালকোটের পাসরুর সেনানিবাসে গিয়ে শেহবাজ বলেন, পাকিস্তানের সেনারা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ও দ্রুত জবাব দিয়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছে।
শেহবাজ শরিফ তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে শুধু মাত্র পাকসেনাদের পরাজয়ের স্মৃতিচারণই করেননি, বরং একাত্তরে নিরস্ত্র বাঙালির উপর চালানো #নির্মম #গণহত্যাকে ক্ষমাহীন সমর্থনও দিয়েছেন।
একাত্তরে বাংলাদেশে ঘটানো গণহত্যার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান?
ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এনে ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ২৫ শে মার্চকে রাষ্ট্রীয়ভাবে #গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালি জাতিস্বত্তা এবং বাংলার মানুষের মুক্তির স্পৃহাকে ধ্বংস করতে #গণহত্যা শুরু করে পাক #হানাদার বাহিনী।
‘পাকিস্তান কখনো বাংলাদেশে গণহত্যায় তাদের দায় স্বীকার করেনি। শুধু তাই নয়, সেসময়ে পাকিস্তানের সমর্থক ও মিত্ররাও বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দায় এড়াতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেসস্টাডি হিসেবে পড়ানো হয়। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশনের নির্বাহী পরিচালক এলিসা ভন ফরগের মতে, বিশ্বে গণহত্যা বন্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় #গণহত্যার স্বীকৃতি এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। উল্লেখ্য, সংস্থাটি ২০২২ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত একাত্তরে #গণহত্যার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের অভিযান চালায়। এতে প্রায় ৫০ হাজার বেসামরিক মানুষকে #হত্যা করা হয়। এরপর যুদ্ধের ৯ মাসে #হত্যা করা হয় ৩০ লাখ মানুষ।’ (#গণহত্যার স্বীকৃতি কতদূর, কালবেলা, ২৫ মার্চ ২০২৫)
মুক্তিবাহিনীকে ভারতের প্রশিক্ষণঃ
একাত্তরে মুক্তিবাহিনীকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলো ভারত। সেই ক্ষোভেই কিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে শেহবাজ বলেন, “বিশ্ব জানে ১৯৭১ সালে কারা মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এখন তারাই বালুচ লিবারেশন আর্মি (বেলুচিস্তান স্বাধীনতাপন্থি গোষ্ঠী) এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানকে (পাকিস্তান সরকারবিরোধী গোষ্ঠী) সমর্থন দিচ্ছে। যা মোদির কাছ থেকে আসছে।”
‘জার্মানির বন শহরের বাসিন্দা আলীম হক ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক ভারতীয় সেনা৷ মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদান অনেক৷
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন আলীম হক৷ কিন্তু দেশে তখন চলছে অস্থিরতা, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশ৷ আশির দশকে জীবন-জীবিকার তাগিদে আলীম তাই পাড়ি জমান জার্মানিতে৷’ ( মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের অবদান অনেক: আলীম হক, ডয়েচ ভেলে, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১)
শুধু মুক্তি বাহিনীর প্রশিক্ষণই নয় ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর যুদ্ধে জড়ানো সহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন থেকে তা জানা যায়।
‘ সেনারা যখন যুদ্ধের প্রস্তুতি আরম্ভ করেছে, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কিন্তু নিজে তখন দুনিয়াময় ঘুরে কূটনীতির হোমওয়ার্ক করতে শুরু করে দিয়েছেন।
ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরীর কথায়, “মার্চে ক্র্যাক ডাউনের পর পরই যখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে হুড় হুড় করে শরণার্থীরা ভারতে ঢুকতে শুরু করল, ইন্দিরা গান্ধী তখন বিশ্বের বিভিন্ন রাজধানীতে ঘুরে ঘুরে বলতে লাগলেন – পাকিস্তান যেন তাদের দেশের বাঙালিদের ওপর এই চরম অত্যাচার বন্ধ করে। কারণ এতে ভারতে যে বিপুল শরণার্থীর স্রোত ঢুকছে, সেই ভার বহন করা ভারতের ক্ষমতার বাইরে।’ (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কী ছিল ভারতীয় সেনার সামরিক কৌশল ? বিবিসি বাংলা, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬)
একাত্তরের মতই বালুচিস্তানেও চলছে পাকসেনাদের বর্বরতাঃ
‘বালুচিস্তানে ২০ হাজারের বেশি মানুষ উধাও হয়ে গেছে, যাদের বেশিরভাগই জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক কর্মী। অভিযোগ সামরিক বাহিনীই এর নেপথ্যে। বালুচ মধ্যবিত্তই নাকি তাদের টার্গেট, উদ্দেশ্য বালুচ জাতীয়তাবাদকে নিশ্চিহ্ণ করা।বিবিসির এম ইলিয়াস খানের প্রতিবেদন:
সানা বালুচ নিখোঁজ হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় তিন মাস।
গত ১১ই মে এই খারান শহরের উপকন্ঠ থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেলেন সানা।
সানার ঘটনাটি অভিনব কিছু নয়। বালুচিস্তানে এই ঘটনা ঘটেছে আরও বহু মানুষের ভাগ্যে। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ পাকিস্তানের এই প্রদেশটিতে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ। বালুচিস্তানে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে সেটি দমনে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী নৃশংস পথ বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ। তবে সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করে।’ ( বালুচিস্তান: স্বাধীন মাতৃভূমির স্বপ্নের জন্য লড়ছে পাকিস্তানের যে মধ্যবিত্ত তরুণরা, বিবিসি, ২ অগাস্ট ২০২০)
ইউনূসের বাঙালি গণহত্যাকারী পাকিস্তান প্রীতিঃ
‘পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা স্বাধীনতাপূর্ব অভিন্ন সম্পদের জন্য বকেয়া অর্থ দাবির’ মতো বিষয় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের দিক থেকে যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তাতে এই অমীমাংসিত বিষয়গুলোর কোনো উল্লেখ নেই।’ ( ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে, বিবিসি বাংলা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫)
দেড় দশক পর হওয়া এই বৈঠকে ইসলামাবাদের সাথে সম্পর্ক জোরদারের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের। এছাড়াও, করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আকাশপথে ফের সরাসরি যোগাযোগ চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
একাত্তরে গণহত্যার দায় স্বীকার কিংবা অভিন্ন সম্পদের বকেয়া দুটো বিষয় পাকিস্তান এড়িয়ে গেলেও ইউনূস টিভি-মিডিয়াগুলোতে বেকুবের মত ফলাও করে তার ঢোল পিটিয়েছে। এরপরেও পাকিস্তানপ্রীতি ছাড়েনি ইউনূস এখনো যে পাকসেনারা বালুচিস্তানে নির্বিচারে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র জনগণের উপর গুম-খুনের নৃশংস নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। জানুয়ারিতে বাংলাদেশি আর্মি জেনারেলদের পাকিস্তান সফর এবং সম্প্রতি আকস্মিক ছুটিতে চলে যাওয়া পাকস্তান হাইকমিশনার মারুফের কক্সবাজার সফর করে রোহিঙ্গাদের সাথে বৈঠক ইউনূসের প্রশ্রয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের আভাসই দিচ্ছে।