রাত ছিল গভীর। শহর ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু হানাদাররা জেগে ছিল। তারা এসেছিল এক কণ্ঠরোধের মিশনে। ধানমন্ডির পেছনের ছোট্ট বাসাটায়, তারা ঢুকে পড়েছিল দরজা ভেঙে। আর হিংস্র শকুনের মতো তুলে নিয়ে গেলো মমতাজকে—এই দেশের লোকগানের সম্রাজ্ঞীকে, বাংলার ঘরের মেয়ে, মাঠের গানের কণ্ঠস্বর।
তারা এটাকে বলছে গ্রেফতার! কিন্তু সবাই জানে, এটা আয়োজন করে শিকার অভিযানের নতুন নাম! এই সরকার, এই দানব রাষ্ট্র, এখন শিল্পীদের ভয় পায়। তারা জানে—একটা গানের শক্তি, একটা কণ্ঠ, একটা কথা কত বড় বোমা হতে পারে। মমতাজ সেই শক্তি। তার গানে ছিল দেশের ধুলো, মানুষের অভাব, মায়ের মুখ, প্রেম, ক্ষোভ—তারা সেটা সহ্য করতে পারেনি।
তারা চায়—শিল্পীরা চুপ থাকুক।
তারা চায়—সংস্কৃতি হয়ে যাক শুধুই ক্ষমতাবানদের স্তবক।
তারা চায়—মমতাজের কণ্ঠ হোক প্রি-রেকর্ডেড, এডিটেড, অনুমোদিত।
কিন্তু আপনি তো রাজি হননি, মমতাজ!
তাই তারা ভয় পেয়েছে।
তারা জানে—মমতাজকে না থামালে গ্রাম গাইবে, শহর গাইবে, শ্রমিক গাইবে, নারীরা গাইবে। আর এই গান, এই গর্জন, এই কান্না—শেষমেশ রাস্তায় নেমে আসবে। তাই তারা শুরু করেছে। বেছে বেছে তুলে নিচ্ছে প্রতিটা কণ্ঠ। আজ আপনি, কাল আমি।
আপনার চোখে চোখ রেখে তারা যা করেছে, সেটা আমাদের বুকের ভেতর গেঁথে দিয়েছে এক চিরস্থায়ী দাগ। এটা অপমানের, ক্ষোভের, প্রতিশোধের দাগ। তারা ভাবছে মানুষ ভুলে যাবে? না। মাটি জানে, বাতাস জানে, এই মমতাজের গলা একদিন আবার ফিরবে, আবার কাঁপাবে।
এই মুহূর্তে আমরা যদি চুপ থাকি, আমরা যদি মমতাজের পক্ষে না দাঁড়াই—তাহলে একদিন আমাদেরও কেউ থাকবে না। তখন দরজা ভাঙবে আমাদের ঘরেও, মুখ চেপে ধরা হবে আমাদের গলাও