দেখে মনে হয় এই দেশটায় এখন কেউ আর ঘুম থেকে উঠে ভালো খবর শোনে না। শুধু হিসাবের খাতা খুললেই বোঝা যায়, আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি—একটা জাতি, একটা অর্থনীতি, একটা স্বপ্ন। মহামারির ধাক্কা সামলে উঠেছিল দেশ। টিকে ছিল, মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল। ঠিক তখনই, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, মোহাম্মদ ইউনুস নামের একজন লোক কায়েম করলেন ইতিহাসের অন্যতম কুৎসিত রাজনৈতিক ডাকাতি—জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে নিজের গায়ে ‘অন্তর্বর্তী’ নামের একটা ধোপদুরস্ত চাদর জড়িয়ে বসে পড়লেন গদিতে। এখন, প্রায় এক বছর যেতে না যেতেই সেই অ-সরকার দেশকে নামিয়ে আনলো এমন একটা অর্থনৈতিক গহ্বরে, যেখানে চারপাশে শুধু ক্ষয়, অন্ধকার আর চরম অপদার্থতার গন্ধ।
৩.৯৭ শতাংশ। এটুকু পড়ে মাথা চক্কর দেয়াই স্বাভাবিক, কারণ কোভিডের ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে গেছে এই সংখ্যা। একচেটিয়া ব্যর্থতার ঝাণ্ডা ওড়ানো এই তথাকথিত সরকার শুধু দেশের অর্থনীতিকে নয়, দেশের মেরুদণ্ডকেই ভেঙে দিয়েছে। এরা পরিকল্পনা জানে না, বাস্তবতা বোঝে না, অথচ ঘাড়ে বসে আছে গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল সেজে। করোনার সময়ে, যখন গোটা পৃথিবী হাহাকার করছিল, তখনও বাংলাদেশ ৩.৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছিল। আজ? আজ একঝাঁক তথাকথিত “দার্শনিক” আর মঞ্চ-কাঁপানো বক্তা মিলে রাষ্ট্র চালাচ্ছে, আর ফলাফল চোখের সামনে।
কৃষি খাত, যেখানে দেশের কোটি মানুষের জীবন বেঁচে থাকে, সেখানে এখন মাত্র ১.৭৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এই সরকার জানেই না যে কৃষি মানে শুধু ধান গম না, এটা জীবনরেখা। অথচ একে রেখেছে অবহেলার পাতালে। কৃষক মরছে, ফলন নষ্ট হচ্ছে, কিন্তু ইউনুস বাহিনী ব্যস্ত বিদেশিদের জন্য পিআর প্যাকেজ বানাতে। সেবা খাতেও ধস, ৪.৫১ শতাংশে এসে ঠেকেছে। মানুষ খরচ করছে না, কারণ তাদের হাতে টাকা নেই। কাজ নেই। দাম আকাশে, ক্রয়ক্ষমতা পাতালে। শিল্প খাতেও এক রকম মৃতপ্রায় অবস্থা, একমাত্র তৈরি পোশাক টিকে আছে আগের গতি থেকে, বাকিগুলো নিঃশব্দে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
বিনিয়োগ? সেটা তো এখন গল্প। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ পড়ে গেছে। ঋণ প্রবৃদ্ধিও ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। দেশি-বিদেশি কেউ এখন এই সরকারের ওপর আস্থা রাখছে না। বিদেশিরা, যারা ইউনুসকে এই গদিতে বসিয়েছিল, তারাও এখন পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। আর ইউনুস সাহেব মুচকি হেসে জাতির সামনে ডলার ডলার গল্প শুনাচ্ছেন, অথচ বাস্তবে মানুষ বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিছুই কিনতে পারছে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে এক অদ্ভুত মেকআপ চলছে, যেন এই একটা খাত বাঁচিয়ে বাকিটা ধ্বংস করলেও চলবে। গ্যাস খাতে প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়েছে। অথচ তারাও বলবে, “দেশ এগোচ্ছে!” কী এগোচ্ছে? কার পকেট ফুলছে? কতজনের ঘর বন্ধ, কতগুলো কারখানায় তালা, সেই হিসাব কী কেউ দিচ্ছে?
মাথাপিছু আয় কিছুটা বেড়েছে দেখিয়ে বড়াই করে তারা। অথচ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বলছে—এই হিসাব ত্রুটিপূর্ণ, পুরনো তথ্য দিয়ে আঁকা। একদল গবেষক বলে দিচ্ছেন, আগস্ট ৫ এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের জিডিপির হিসাবই অতিরঞ্জিত, মিথ্যা, বানোয়াট। এবং এই মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে ইউনুস অ্যান্ড কোম্পানি বানাচ্ছেন মঞ্চ। একটা জঘন্য নাটক, যেখানে জনগণের বাস্তবতা ভুলিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে: “সব ঠিক আছে।”
কিন্তু কিছুই ঠিক নেই। এই সরকার জনগণের নয়, এই সরকার গণতন্ত্রের নয়। এই সরকার টাকার, অস্ত্রের আর ষড়যন্ত্রের। ইসলামি মৌলবাদীদের ছায়ায় বড় হওয়া, বিদেশি মদতে জোর করে গদি দখল করা এই শাসনব্যবস্থা দেশের প্রতিটা শিরা উপশিরায় বিষ ঢেলে দিয়েছে। আর ইউনুস সাহেব, তাঁর কথিত তত্ত্ব, তাঁর তথাকথিত সংলাপ—সবই এখন এক ভয়ংকর ব্যর্থতার মুখোশ।
এটা কোনো সাধারণ অর্থনৈতিক পতন নয়। এটা পরিকল্পিত ধ্বংস, রাষ্ট্রীয় অনাচার। এবং এই অনাচারের একমাত্র নাম মোহাম্মদ ইউনুস। ইতিহাস এদের ক্ষমা করবে না। আর বাংলাদেশের মানুষ? তারা আজ না হোক কাল, ঠিক চিনে নেবে কারা এই পতনের প্রকৃত রচয়িতা।(ছাত্রলীগ পেইজ)