চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহার কীভাবে নির্দোষ হয়ে যায়?—এই প্রশ্ন তুলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে। রাজাকারদের রক্ষাকবচে পরিণত হয়েছে ইউনূস সরকার।
মূলত জামায়াতে ইসলামীর মতো দেশদ্রোহী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠনের স্বার্থরক্ষাই এখনকার সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্যে বলে মন্তব্য করে সংগঠনটি।
আজ শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, হারুন উর রশীদ, সীমা দত্ত, সামিনা লুৎফা, আবদুল্লাহ আল ক্বাফী, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, মাহা মির্জা, আফজাল হোসেইন, মারজিয়া প্রভা প্রমুখ এই বিবৃতি দেন।
তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আজহারুল ইসলামের বেকসুর খালাস যুদ্ধাপরাধের বিচার ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে এবং বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের নগ্ন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ইউনূস সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে রাজাকার আজহার ছিলেন ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর জেলা সভাপতি এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান নেতা। তার নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালিয়েছিল। আজহার ছিলেন সেই বর্বর সংগঠনের রণনীতির মুখ্য রূপকার। এমন ব্যক্তিকে নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস দেওয়া ইতিহাস, ন্যায়বিচার এবং শহীদদের আত্মত্যাগের চরম অপমান।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দলগত অপরাধের পরিবর্তে ব্যক্তি পর্যায়ে বিচারের যে সীমাবদ্ধতা ছিল, তার সুযোগ নিয়েই জামায়াতের শীর্ষ নেতারা আইনের ফাঁকফোকরে রেহাই পাচ্ছে। বিশ্ব ইতিহাসে যেভাবে নাৎসি দল, খেমার রুজ কিংবা রুয়ান্ডার গণহত্যাকারী দলসমূহকে সংগঠিত অপরাধের ভিত্তিতে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে, বাংলাদেশে তেমনটা হয়নি—এটা শুধু বিচার বিভাগের ব্যর্থতা নয়, রাজনৈতিক আপসেরও নির্মম ফলাফল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার নিজেরাই ট্রাইব্যুনালকে ত্রুটিপূর্ণ বললেও সেই একই ট্রাইব্যুনালের রায় পুনর্বিবেচনার নামে এক মহা প্রহসনের আয়োজন করেছে। এটি ‘ন্যায়বিচার’ নয়, এটি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার এক পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় চক্রান্ত।
কমিটির অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাঠামোকে এমনভাবে গড়েছে, যেখানে প্রসিকিউশনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরাই এক সময় যুদ্ধাপরাধী আসামিদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন। এটা স্পষ্ট স্বার্থের সংঘাত (conflict of interest), যা বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অবিশ্বাসযোগ্য ও দুর্বল করে তুলেছে। এই অবস্থায় যুদ্ধাপরাধীর খালাস ন্যায়বিচারের অপমৃত্যু ছাড়া কিছু নয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জামায়াত নেতা রাজাকার আজহারের খালাস শুধু বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ভেঙে দেয়নি, বরং এটি ২০২৫ সালের জুলাই আন্দোলনের মূল আকাঙ্ক্ষা—গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধেও বিরাট আঘাত। একই সঙ্গে এই রায় জামায়াতের আগাম ভবিষ্যৎ রক্ষার ‘বন্দোবস্ত’ও নিশ্চিত করে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাজাকার আজহারের খালাসের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রশিবিরের বর্বর হামলা প্রমাণ করে, জামায়াত ও তার ছাত্রসংগঠন এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
নারী শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিত হামলা, হুমকি ও নির্যাতনের ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ফ্যাসিবাদী মানসিকতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে শিবির।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধীদের দলগত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।