এই প্রথম দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো, যেখানে কোনো চুক্তি, সমঝোতা স্মারক কিংবা দৃশ্যমান প্রতিশ্রুতি স্বাক্ষরিত হলো না—যা একদিকে অভূতপূর্ব, অন্যদিকে কূটনৈতিকভাবে হতাশাজনক।
৩০শে মে, শুক্রবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারের রীতিমাফিক কথাবার্তা ছাড়া বাস্তবভিত্তিক কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) সই করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তার জন্য ভবিষ্যতের একটি অনির্দিষ্ট সময়কে দেখানো হয়েছে—এ বছরের “শেষ নাগাদ”। এমন অস্পষ্ট ঘোষণা কার্যত আশাবাদের বাইরে বিশেষ কিছু নয়।
বৈঠকে ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে ছিল একের পর এক অনুরোধ—জাপানের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহজ শর্তে ঋণ, এলএনজি-এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে সহযোগিতা, দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ, স্কলারশিপ বৃদ্ধি, এমনকি কারিগরি প্রশিক্ষণসহ বহু বিষয়ে সহায়তার আহ্বান। কিন্তু এসব আবেদনের জবাবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাস দেননি।
শুধুমাত্র সৌজন্যমূলক কিছু প্রশংসা ও ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সহযোগিতার অঙ্গীকার ছাড়া জাপানের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি, আর্থিক সহায়তা বা চুক্তি হয়নি। ইশিবার মন্তব্য—“গণতান্ত্রিক উত্তরণে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে”—শ্রুতিমধুর হলেও বাস্তব সহযোগিতার রূপরেখা তুলে ধরেনি।
ড. ইউনূসের বক্তব্যে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’র যে দাবি করা হয়েছে, তা বাস্তব কোনো ফলাফলের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়নি। বরং রোহিঙ্গা সংকটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও জাপানের ভূমিকা নিয়ে শুধু আশা প্রকাশেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অতীতে উচ্চপর্যায়ের অনেক সফল কূটনৈতিক সংলাপ ও সহযোগিতা হলেও, এবারের বৈঠকটি ব্যতিক্রমভাবে লক্ষণীয়—কারণ এটিই একমাত্র শীর্ষ বৈঠক যেখানে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি, আর্থিক সহযোগিতা বা দৃঢ় অঙ্গীকার দেখা যায়নি। এটি কেবলমাত্র সৌজন্য এবং অনুরোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।