রাখাইন, ৩০ মে ২০২৫: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কৌশলগত কিয়াউকফিউ বন্দর শহরে আরাকান আর্মি (এএ) এবং জান্তা বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে এক শীর্ষ জান্তা জেনারেল নিহত হয়েছেন। এই সংঘর্ষে বিদ্রোহীরা জান্তা বাহিনীর একাধিক অবস্থান দখল করেছে, যার মধ্যে চীনা বিনিয়োগ কেন্দ্র কিয়াউকফিউর কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও রয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কিয়াউকফিউ-রাম্রি সড়কের পাশে পিয়াইন সি কাই গ্রামের কাছে ব্যাপক লড়াই চলছে। কিয়াউকফিউ শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই এলাকায় আরাকান আর্মি জান্তাদের একটি সদর দপ্তর ঘিরে ফেলেছে। এছাড়া, চীনের তেল ও গ্যাস টার্মিনালের কাছাকাছি এলাকায়ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
গত সোমবার (২৬ মে) আরাকান আর্মির স্নাইপার হামলায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিয়াও মিও আউং এবং একজন সেনা ক্যাপ্টেন নিহত হন। ৪৫ বছর বয়সী কিয়াও মিও আউং ১১ নম্বর ডিভিশনের একজন কৌশলবিদ ছিলেন। তাঁর মরদেহ বিশেষ বিমানে ইয়াঙ্গুনে পাঠানো হয়, এবং বৃহস্পতিবার মিংগালাডন সামরিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি কর্তব্য পালনকালে প্রাণ হারিয়েছেন।
জান্তা সরকার কিয়াউকফিউ শহর রক্ষায় স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী নিয়োজিত করেছে। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জান্তা বাহিনীকে ড্রোন হামলায় সহায়তা করছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জান্তা সরকার একটি আইন পাস করে, যার মাধ্যমে চীনা নিরাপত্তা বাহিনীকে মিয়ানমারে অস্ত্র বহন করে তাদের বিনিয়োগ রক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে কিয়াউকফিউতে চীনা কর্মীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন এখানে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে, যা ভারত মহাসাগরে বেইজিংয়ের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে। এছাড়া, চীনের তেল ও গ্যাস পাইপলাইন কিয়াউকফিউ থেকে শুরু হয়ে ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, লড়াই শহরের কাছাকাছি পৌঁছায় অনেক জান্তা প্রশাসক কিয়াউকফিউ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। এই সংঘর্ষ কিয়াউকফিউর কৌশলগত গুরুত্ব এবং চীনা বিনিয়োগের নিরাপত্তার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।