।। রাজীব আবদুল্লাহ।।
চীন চুপ। কাতার নিরুত্তর। আমিরাত শুধু কাঁধে হাত রেখেই ক্ষান্ত। সৌদি কেবল কূটনৈতিক সৌজন্যে সীমাবদ্ধ। কেউই টাকা দিচ্ছে না। কেউই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না। অথচ ঢাকায় বসে এক দখলদার নামিয়ে ফেলেছে দেশের সর্বশেষ গণতান্ত্রিক অবকাঠামো, আর এখন বিশ্বসভায় নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান সাজিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একটা নির্লজ্জ তামাশা চলছে—নিয়মতান্ত্রিকতার মুখোশে, অবৈধতার মহড়া। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা ফেলতেই বুঝে ফেলেছেন—দুনিয়া হাসছে, কেউ পাশে নেই।
চীনে গেছেন, কাতার গেছেন, দুবাই গেছেন—সবখানে করমর্দন, সম্মেলন, বৈঠক হয়েছে। কিন্তু হাত পাতার পর ভরার কিছু নেই। কেবল শুনতে পেয়েছেন “আমরা দেখছি”, “আমরা ভাবছি”, “আমরা মূল্যায়ন করছি”। এসব কথার অর্থ একটাই—“তোমাকে আমরা সরকার হিসেবে মেনে নিইনি। আপাতত শুধু দেখছি তুমি কতটুকু ঠিকে থাকতে পারো”। এই অবহেলার বুলেটগুলো সুসজ্জিত রাজকীয় কফিনেই পোঁতা হয়েছে। টাকা নেই, প্রতিশ্রুতি নেই, কারণ আস্থার খাতা শূন্য।
যে সরকার নিজের দেশের জনগণের অনুমোদন ছাড়া ক্ষমতায় বসে, দুনিয়া তাকে কতটুকু পাত্তা দেয় সেটা আর বলার প্রয়োজন পড়ে না। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হিসাবেই তো লেখা আছে—চীন কোনো ঋণ দেয়নি। মধ্যপ্রাচ্য দিয়েছে বটে, তবে এতটাই নগণ্য যে সেই ঋণকে তালিকার ভেতরে স্থান দেয়া হয়নি। এরচেয়ে বড় অপমান আর কী হতে পারে?
এখন প্রশ্ন হলো—কেন দিচ্ছে না? চীন তো একসময় ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে কৌশলগত অংশীদার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বহু বছর ধরেই বাংলাদেশে বিপুল অর্থ প্রবাহিত করে এসেছে। তাহলে এখন কেনো তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? কারণ তারা জানে, এই সরকার টেকসই নয়। এই সরকার বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই সরকার অবৈধ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির সবচেয়ে মৌলিক নীতিগুলোর একটি হলো—নাগরিক-সমর্থনহীন সরকারের সঙ্গে বড় চুক্তি করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ সরকার যেকোনো সময় উড়ে যেতে পারে, যেকোনো সময় ইতিহাসের গর্তে চাপা পড়ে যেতে পারে। তাই চীন, কাতার, আরব আমিরাত কেউই টাকা ঢালার ঝুঁকি নিচ্ছে না। সৌজন্য রক্ষা করে মুখে বলছে “সমর্থন করছি”, কিন্তু কার্যত কিছুই করছে না।
আর এই তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্ররা এখন কেবল অপেক্ষায়—কবে চীন বা কাতার কিছু বলবে, কবে একটা চিঠি আসবে, কবে কেউ বলবে “হ্যাঁ, নিচ্ছি তোমাদের সিরিয়াসলি।” কিন্তু এমন কোনো দিন আর হয়তো আসবে না। কারণ বিশ্ব জানে, জনগণের অনুমোদন ছাড়া গড়ে তোলা যে কোনো কাঠামো—তাতে পেরেক মেরে লাভ নেই। ওটা টিকবে না।
আজ এই সরকারের আন্তর্জাতিক বেইজ্জতির হিসাবটা শুধু অর্থনৈতিক নয়—এটা রাজনৈতিক, এটা নৈতিক। ক্ষমতায় বসার ছক কষে যারা মনে করেছিল বিদেশি শক্তি তাদের কাঁধে হাত রাখবে, আজ তারাই সবচেয়ে বেশি চুপচাপ, কারণ সেই হাত আসেনি। কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। দুনিয়া দেখছে, বুঝছে, কিন্তু বলছে না। তারা শুধু কাজের মাধ্যমে বলে দিচ্ছে—”আমরা পেছনে নেই।”
শেষ কথা একটাই—বিশ্ব যখন চুপ করে দেয়, বুঝে নিতে হয়—তোমাকে তারা মেনে নেয়নি। যত কাগজে-কলমে ক্ষমতা থাক, যত পতাকা সামনে উড়ুক—বিশ্বাস আর সমর্থন ছাড়া কিছুই টিকে না। এই সরকার শুধু দেশের ভেতরে নয়, বাইরেও আজ নগ্ন, একা, অবহেলিত। এটা তাদের বানানো ইতিহাসেরই উপযুক্ত ফল।