হাসান মোরশেদ অনুসন্ধানী লেখক, সাংবাদিক। তাঁর প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য:
গতকাল রাত থেকে মুলধারায় সব মিডিয়ায় নিউজ হবার পর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ধাক্কায় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের সচিব, উপদেষ্টা, সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা এবং অনলাইনে তাদের তাবেদাররা বলা শুরু করেছে- বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা সহ মুক্তিযুদ্ধকালীন এমএনএ ও এমপিএদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়নি।
আসুন, সরকারী ওয়েব সাইটে প্রকাশিত গেজেটখানি দেখি।

প্রথম ১০ নম্বর পয়েন্ট-❝বীর মুক্তিযোদ্ধা❞র সংজ্ঞা। হলুদ চিহ্নিত অংশ- ‘প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার(মুজিব নগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী’। এটুকুতে মনে হবে মুজিব নগর সরকারকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞায় রাখা হয়েছে। ভালো কথা- মুজিব নগর সরকারের শুরু রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে দিয়ে যিনি পদাধিকার বলে আর্মড ফোর্সেস- এর সুপ্রীম কমান্ডার। আগের পোস্টে লিখেছি, এমএনএ ও এমপিএরা জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে এই সরকার গঠন করেন। তারা ১১টি সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের নেতৃত্বে ১৬টি মন্ত্রনালয় চালু থাকে। এই মন্ত্রনালয়গুলোতে সচিব থেকে পিয়ন পর্যন্ত ছিলেন। মুজিব নগর সরকার মানে রাষ্ট্রপতি থেকে মন্ত্রী, এমপি, সচিব হয়ে ঐ পিয়ন পর্যন্ত। সরকার মানে শুধু মন্ত্রীপরিষদ নহে।
এবার আসেন ১৫ নম্বর পয়েন্টে- ❝মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী❞। গ- তে জ্বলজ্বলে অক্ষরে লেখা এমএনএ ও এমপিএ রা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, মুক্তিযোদ্ধা নন। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন, মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার- এরা প্রত্যেকেই এমএনএ হিসেবে এই ক্যাটাগরি ভুক্ত।
আরো মজা আছে।
১০(খ) অনুযায়ী আহত মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীগন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’।
আবার ১৫(খ) অনুযায়ী মুজিব নগর সরকারের নিয়োগ দেয়া ডাক্তার, নার্স, অন্যান্য সহকারী হচ্ছেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।
দেশের সকল মানুষকে এই এনজিওওয়ালারা নিজেদের ঋণগ্রহীতা ভাবছে। অসহায়, নিরুপায় মানুষ- যা বুঝানো হবে তাই বুঝবে। কথা স্পষ্ট, বাটপারি বাদ দেন।
লেখক ও সাংবাদিক কবির য়াহমদ–এর মন্তব্য
বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব নিয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে সরকার। যদিও বলছে এখন তারা খেতাব বাতিল করেনি।
যে গেজেট দিয়েছে সরকার, তাতে বঙ্গবন্ধুর নামোল্লেখ করেনি, তবে যা লিখেছে সেটা তাঁর খেতাব বাতিলের পর্যায়েই পড়ে। পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা।
রাতে গেজেট দিয়ে সকালে এসে গণমাধ্যমের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়াতে চেয়েছে তারা। এখানে কথা বলেছেন ফারুক-ই আজম ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এরা উপদেষ্টা, তবে উপদেষ্টা হলেই যে ভাষার রাজনীতি, ভাষার অর্থ উদ্ধার করে ফেলবেন এমন না।
উপদেষ্টা ফারুক দেখলাম এইচএসসি পাস; ফারুকী সম্ভবত এসএসসি। আচ্ছা, বঙ্গবন্ধুকে তারা যদি অস্বীকারও করে, তাতে ইতিহাসের কী যায় আসে? তারা তো একাত্তরকে অস্বীকার করতেই এসেছে…তাই না!