আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত অনেকে দীর্ঘদিন ধরে প্রমাণ ছাড়া আটক রয়েছেন। এ ধরনের আটক ও জামিন না পাওয়া বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও সরকারের সংস্কার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ বিষয়ে লিখেছেন ডেভিড বার্গম্যান।
সম্প্রতি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আনোয়ারা বেগম, দুই জনই জামিন পেয়েছেন। জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ও বর্তমানে ব্যবসায়ী শমী কায়সার কারাবন্দী আছেন ৬ মাস ধরে। সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ ৮ মাস, সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর ৭ মাস; লেখক ও নির্মূল কমিটির সাবেক নেতা শাহরিয়ার কবির ৮ মাস আর জ্যেষ্ঠ সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত ৭ মাস ধরে কারাবন্দী।
এই সাতজনকে যে দীর্ঘমেয়াদি কারাবাসের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তা গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত গুরুতর সহিংস ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের অভিযোগে।
ওই কালজুড়ে যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সহিংসতা, মূলত রাষ্ট্রীয় নির্দেশনাতেই সংঘটিত হয়েছিল। এতে বিপুল প্রাণহানি ও বহু মানুষ আহত হন। সম্প্রতি একই ধরনের মামলায় আটক হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাবেক সংসদ সদস্য সংগীতশিল্পী মমতাজ।
শুরুতে যে ৭ জনের কথা বলেছি, তাঁদের আটকের মধ্যে একাধিক মিল পাওয়া যায়। তাঁদের সবাইকে একটি নির্দিষ্ট গোলাগুলির ঘটনায় হত্যা বা হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে এই অভিযোগের পক্ষে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে, এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
তাঁদের গ্রেপ্তারের ভিত্তি হচ্ছে, ওই সময় আহত বা নিহত ব্যক্তিদের স্বজনের দায়ের করা এফআইআর (প্রথম তথ্য প্রতিবেদন)। এই এফআইআরে অভিযোগ তোলা হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বা ওই গোলাগুলির জন্য অর্থ জোগান দেওয়া কিংবা তা উসকে দেওয়ার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
পুলিশ গ্রেপ্তারের আগে কোনো ধরনের তদন্তের চেষ্টা পর্যন্ত করেনি। দীর্ঘ কয়েক মাস আটক রাখার পরও এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ আদালতে এমন কোনো নতুন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি, যা এই নির্দিষ্ট অভিযোগগুলোর সঙ্গে তাঁদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে।
ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা আদালত, এমনকি উচ্চ আদালতেও— প্রতিটি স্তরে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আইনজীবীরা জামিনের বিরোধিতা করেছেন। আদালতগুলোও প্রমাণের অভাব উপেক্ষা করে এই আটকাদেশগুলো বারবার বহাল রেখেছেন। যেখানে উচ্চ আদালত সাময়িক জামিন দিয়েছেন, সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ চেয়েছে ও তা পেয়েছেও। ফারজানা রুপারটিই একমাত্র মামলা, যেখানে পূর্ণ শুনানির পর জামিন মঞ্জুর হয়েছিল। সেখানে পুলিশ একটি অন্য এফআইআরের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে তাঁকে আবার ‘গ্রেপ্তার’ দেখিয়ে সেই জামিন অকার্যকর করে এবং আবার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করেই।
এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। লেখার শুরুতে যে নামগুলো উল্লেখ করেছি যদিও তাঁরা বিশেষভাবে পরিচিত, তথাপি একই ধরনের অসার আইনি ভিত্তির ওপর আটক রয়েছেন সম্ভবত ডজনখানেক, এমনকি হয়তো শতাধিক অন্য মানুষ।
আর এ নিয়ে এক ধরনের বাণিজ্য চলছে এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকে। বিচারব্যবস্থা যেন এমন সব মানুষকে দীর্ঘদিন কারাগারে পড়ে থাকতে দিতে অস্বস্তি বোধ করছে না। এসব মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাঁরা বয়োবৃদ্ধ এবং গুরুতর অসুস্থ, তাঁরাও জামিন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য জামিন পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যেমন সাবেক বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী আবদুল মান্নান গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিন পেয়েছেন।
সম্প্রতি হত্যাচেষ্টা মামলায় আটক হয়েছিলেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া, তিনিও জামিন পেয়েছেন। তবে তাঁর গ্রেপ্তার নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার কারণে সম্ভবত তিনি জামিন পেয়েছেন। একই ঘটনা ঘটেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের ক্ষেত্রে। তিনিও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে জামিন পান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব অনিয়ম নিয়ে নাগরিক সমাজ ও মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো অস্বস্তিকর রকম নীরব।
অনেকেই আশা করেছিলেন যে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিস্তার লাভ করা যথেচ্ছ ও অন্যায় আটক রাখার সংস্কৃতি তাদের পতনের মধ্য দিয়ে এর অবসান ঘটবে। কিন্তু তার বদলে দেখা যাচ্ছে, নতুন সরকার মুখে সংস্কারের যতই বুলি আওড়াক, এই পুরোনো দমনমূলক চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় না কিংবা হয়তো পারছে না।
এ-ও সত্য হতে পারে যে এই আটকগুলোর অনেকগুলোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এফআইআরের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। এগুলো হয়তো সরাসরি সরকারের নয়, বরং রাজনৈতিক দল বা অন্য রাজনৈতিক চরিত্রের সহায়তায় দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এসব অপব্যবহারে হস্তক্ষেপ করে সেগুলো সংশোধন করতে সরকারের ব্যর্থতা অগ্রহণযোগ্য।
সরকারের যাচাই করা তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ৮০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সাবেক সরকার এবং তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত সহিংস ব্যক্তিরা পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে যুক্ত ছিলেন, যার মধ্যে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও রয়েছে।’
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, বহু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে এবং অনেকেই আছেন, যাঁদের গ্রেপ্তার ও আটক হওয়াটাই প্রাপ্য ছিল, যেমনটি অনেকের ক্ষেত্রে ঘটেছেও।
কিন্তু ওপরে উল্লিখিত ব্যক্তিরাসহ বর্তমানে যেসব ব্যক্তি কারাগারে রয়েছেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা বা হত্যাপ্রচেষ্টার কোনো বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ নেই। এ মানুষগুলো বন্দী থাকার মূল কারণ হলো, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সমর্থক। তাঁরা গত ১৫ বছরের শাসনামলে প্রবলভাবে সরকারের অনুগত ছিলেন।
তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ অবশ্যই থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তাঁরা এমন এক সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যে সরকার বিরোধী দল দমন করেছে, নির্বাচনে জালিয়াতি করেছে, গুম করেছে, সংবাদমাধ্যমকে চুপ করিয়ে রেখেছে ও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অন্যায়ভাবে মানুষকে আটক রেখেছে। তবু রাজনৈতিক আনুগত্য কিংবা কোনো কর্তৃত্ববাদী শাসনের কট্টর সমর্থক বা প্রচারক হওয়াটাই অপরাধ নয়।
এটা ঠিক যে সাংবাদিক ও সম্পাদক শাকিল আহমেদ ও মোজাম্মেল বাবু গত ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এডিটরস গিল্ডের এক বৈঠকে আন্দোলনকারীদের নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন, এমন রেকর্ডও রয়েছে।
আবার শমী কায়সার, যাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল বিটিভির নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে, তিনিও ১ আগস্ট পুড়ে যাওয়া বিটিভি ভবনের সামনে একটি বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় তাঁর উদ্বেগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের চেয়ে বিক্ষোভকারীদের দ্বারা হওয়া ক্ষয়ক্ষতির দিকেই যেন বেশি ছিল।
এ ধরনের বক্তব্যের কিছু অংশ ধাক্কা খাওয়ার মতো ছিল। তবে এসব বক্তব্যের কোনো অংশেই দেখা যায় না যে তাঁরা কেউ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন বা তা সমর্থন করেছেন। আরও স্পষ্ট করে বললে, তাঁদের আটক রাখার যে নির্দিষ্ট অভিযোগ, সেই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এসব রেকর্ডে নেই।
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর সরকার দ্য বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার, ১৯৭২ নামের একটি আইন প্রণয়ন করে। আইনটির মাধ্যমে এমন ব্যক্তিদের বিচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যারা সংঘাত চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ‘সহযোগিতা’ করেছিল। তাদের কার্যকলাপ প্রচলিত সহিংস অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার মতো না হলেও তা ‘সহযোগিতা’ হিসেবে এই আইনে গণ্য হতে পারে।
এখন আওয়ামী লীগ-সমর্থকদের আটক করে রাখার পক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁদের কেউ কেউ হয়তো আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনকালে দৃঢ় সমর্থন দেওয়া নিয়ে এ রকম একটা আইন থাকলে খুশি হতেন।
কিন্তু বাস্তব হলো, বাংলাদেশের বর্তমান আইনে এমন কোনো অপরাধ স্বীকৃত নয়। আর কেউ যদি ভাবেন, এমন কোনো আইন থাকলে ভালো হতো, তাহলে মনে রাখা দরকার, আইন বানিয়ে কোনো কাজকে অপরাধ হিসেবে দেখানো খুবই বিতর্কিত ব্যাপার। বিশেষ করে, দেশে যখন যুদ্ধাবস্থার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই।
আসলে এমন আইন তখনো সবাই মেনে নেয়নি। ১৯৭৩ সালে, ‘দালাল’দের বিচার শুরু হওয়ার দুই বছর পর শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তিনি ওই আইনে দণ্ডিত ব্যক্তিদের মুক্তি দেন ও ভবিষ্যতে আর কোনো মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
যদিও সময় লেগেছে প্রায় আট মাস, তারপরও বর্তমান সরকার নির্বিচার গ্রেপ্তার কমাতে কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছে, এ কথা স্বীকার করাই যায়। ২০২৫ সালের এপ্রিলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি আদেশ জারি করে।
সেই আদেশে বলা হয়, ওই সময়কার সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে আগে উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন নিতে হবে ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ (প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, ভিডিও, অডিও, ছবি বা কল রেকর্ড) থাকতে হবে। তবে বহুদিন পর নেওয়া আইনি সুরক্ষার এই উদ্যোগ বেশি দূর এগোতে পারেনি। কারণ, হাইকোর্ট তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ দিয়ে তা আটকে দেন। সম্প্রতি অ্যাপিলেট ডিভিশনও তা গ্রহণ করেছে।
সরকার চাইলে আইন পরিবর্তন করে এই বিচারিক বাধা কাটিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু তবু এই আইন শুধু ভবিষ্যতে এ রকমভাবে কোনো গ্রেপ্তার না হওয়া নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। বর্তমানে যাঁরা রাজনৈতিক কারণে আটক, অথচ যাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা বা হত্যাচেষ্টার মামলায় যুক্ত থাকার কোনো প্রমাণই নেই, তাঁদের মুক্তির প্রশ্নে এর কোনো ভূমিকা নেই।
তবে সরকার যদি এসব উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থামাতে চায়, তাহলে এখনো কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে।
যেসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একমাত্র ‘প্রমাণ’ হলো, তাঁরা গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগের প্রতি বাড়াবাড়ি রকম সমর্থন দেখিয়েছেন, অথবা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করেছেন, সেসব ক্ষেত্রে সরকারের উচিত নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সরকারি কৌঁসুলিদের জামিনের বিরোধিতা না করতে নির্দেশ দেওয়া। আদতে এটা শুধু রাজনৈতিক প্রয়োজন নয়, পেশাগত ও সাংবিধানিক দায়িত্বও বটে।
তা ছাড়া এসব অভিযোগসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারেন, এমন সব বিষয় নিয়ে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে না, এমন তো নয়। আর আদালত চাইলে জামিন দেওয়ার শর্ত হিসেবে বিদেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করার মতো ব্যবস্থা নিতে পারেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এমন কিছু শক্তিশালী গোষ্ঠী দৃশ্যমান, যারা আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ও মানবাধিকারকে উপেক্ষা করছে। বড় পরিহাসের বিষয় হলো, এরাই একসময় ঠিক এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে সরব ছিল। এই গোষ্ঠীগুলোর রয়েছে প্রবল রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রচারের ক্ষমতা। এবং তারা সম্ভবত কোনোভাবেই আটক আওয়ামী লীগপন্থীদের মুক্তির পক্ষে যাবে না, তাঁদের আটক অযৌক্তিক বা ভিত্তিহীন হলেও।
এই চাপের মুখে সরকারকে দৃঢ় থাকতে হবে। কিন্তু এই অবস্থানের ভার যদি শুধু আইনমন্ত্রীর কাঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে তা সহজ হবে না; বরং এটি হতে হবে পুরো ইউনূস মন্ত্রিসভার একটি সম্মিলিত অবস্থান। এখানে যাঁরা নিজেদের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করেন, তাঁদের সবারই স্পষ্ট ও প্রকাশ্যে এই বিষয়ে মুখ খুলতে হবে। তাঁদের বলতে হবে—বিচার প্রতিশোধ নয়, এবং সাংবিধানিক গণতন্ত্রে বিচারবহির্ভূতভাবে আটক রাখার কোনো স্থান নেই।
এই মুহূর্তটা শুধু অতীতের ভুল শোধরানোর নয়। এখন বাংলাদেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে যাঁদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আছে, তাঁদের বিচার শুরু হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ আছে, তাঁদের সঠিকভাবে বিচার হবে, এটা মানুষ কীভাবে বিশ্বাস করবে, যদি একই সময়ে যাঁদের বিরুদ্ধে ঠিকমতো কোনো প্রমাণই নেই, তাঁদেরও জেলে আটকে রাখা হয়?
ডেভিড বার্গম্যান সাংবাদিক। বহু বছর ধরে আইসিটির বিচার কার্যক্রম ও বাংলাদেশ নিয়ে লিখছেন। মতামত লেখকের নিজস্ব