করোনা মহামারীর অর্থবছর বাদে দেশে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমেছে গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, কর্মসংস্থান কমছে, বিনিয়োগে চরম স্থবিরতা—যদি এটাই হয় সংস্কার, তবে এই পরিকল্পনার আসল উদ্দেশ্য জনগণের নয়, বরং ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা!
——-
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় দাঁড়িয়ে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৯৭ শতাংশ, যা স্বাভাবিক সময়ের হিসেবে প্রায় তলানিতে। বেসরকারি বিনিয়োগ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের পর সবচেয়ে কম। মূল্যস্ফীতি টানা তিন বছর ধরে ১০ শতাংশের আশপাশে, মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে, আয়বৈষম্য বেড়েছে, শ্রমশক্তি থেকে মানুষ সরে যাচ্ছে। অর্থনীতির এই ধ্বসতুল্য চিত্র সামনে নিয়েই ‘সংস্কার’ নামের এক অভিনব প্রতারণা চালাচ্ছে বর্তমান কর্তৃপক্ষ। যার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত ইউনুস-মডেলের তথাকথিত সংস্কার বাস্তবে জনগণের কোনো স্বার্থে আসে না—বরং তা ক্ষমতা ধরে রাখার এক চতুর কৌশলমাত্র।
সংস্কার না প্রতারণা?
“ইউনুস সংস্কার” বলেই পরিচিত যে মডেলটি, তার মূল কথা ছিল নীতিগত স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক আস্থা, এবং ব্যক্তি খাতের উত্সাহ। কিন্তু বাস্তবে কী দেখছি? ব্যক্তি খাত ব্যাংক ঋণ নিচ্ছে না, বিদেশি বিনিয়োগ পড়েছে আশঙ্কাজনক হারে, বিনিয়োগকারীরা দেশছাড়া, কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে সব খাতে। তাহলে এই সংস্কারের ফসল কী?
অর্থনীতিতে ভয়াবহ অস্থিরতা-
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ কাজ হারিয়েছে। আয় কমেছে উচ্চ ও নিম্ন দক্ষতার সব স্তরের শ্রমিকদের। প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে চরম দারিদ্র্যে। অথচ “সংস্কার” চলছে—কার জন্য? কাদের উন্নয়ন?
এটা জনগণের সংস্কার নয়—এটা ক্ষমতা ধরে রাখার রোডম্যাপ! প্রতিটি পরিবার এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে, বেসরকারি বিনিয়োগ একেবারে মন্দার দিকে। এমনকি সরকার নিজেও বিনিয়োগ কমিয়েছে।
রাজনৈতিক চালাকি = অর্থনৈতিক ধ্বংস
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মব সন্ত্রাস, প্রশাসনিক চরমপন্থা—সব মিলিয়ে বিনিয়োগ পরিবেশ এখন নিকৃষ্ট পর্যায়ে। যেই উন্নয়ন কথায় কথায় প্রচার করা হয়, তার পেছনের বাস্তবতা হলো—দারিদ্র্য, কর্মহীনতা, আস্থাহীনতা।
এই যদি হয় সংস্কার, তাহলে পুরো “সংস্কার”-ই ভুয়া!আজকের বাংলাদেশে যেসব পরিসংখ্যান তুলে ধরা হচ্ছে, সেগুলো “সংস্কার”-এর সাফল্য নয়, বরং একটি ভঙ্গুর অর্থনীতিকে কাগজে-কলমে সফল দেখানোর অপপ্রয়াস।