বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৫ সালের ৩ জুনের তারিখটি মনে রাখবে এই দেশের মানুষ—একটি রাষ্ট্র তার আত্মার চিহ্ন মুছে ফেলেছিল যেদিন, এক অধ্যাদেশ জারি করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ—এই নামগুলো শুধু ব্যক্তি নয়, একেকটা স্বাধীন বাংলাদেশের স্তম্ভ। সেই স্তম্ভে হাত দেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে যে গোষ্ঠী, তারা আসলে এই দেশের শত্রু বললে কম বলা হয়। তারা এই দেশের খোলস পরে এমন এক বিকৃত আত্মা বহন করে, যার উৎস ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি, পাকিস্তানি ভাবাদর্শ আর তাদের বিদেশি দাতারা।
এই যে অধ্যাদেশ জারি করে মুক্তিযুদ্ধের নেতা ও প্রবাসী সরকারের নীতিনির্ধারকদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় মুছে ফেলা হলো—এটা নিছক কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়। এটা হলো সরাসরি ১৯৭১ সালের বিজয়কে অস্বীকার করা। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে যে ঘৃণা, যে প্রতিহিংসা, এবং সবচেয়ে ভয়ানকভাবে, যে ইতিহাসবিমুখ দম্ভ রয়েছে—তা দেখে বোঝা যায়, এই সিদ্ধান্তদাতারা এ দেশের বিজয় মেনে নেয়নি, আজও না।
মোহাম্মদ ইউনুস নামক অবৈধ ক্ষমতা-দখলকারী ব্যক্তির কথায় আসি। তিনি এমন একজন, যিনি দেশের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভেঙে দিয়ে কৃত্রিম আইন ও তথাকথিত আদেশের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার নাম করে এক অদ্ভুত হাইব্রিড স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক অভিভাবক কে সেটা এখন আর কারও অজানা নয়। যাঁরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি পতাকা হাতে বাঙালির রক্তে উৎসব করেছিল, সেই পরাজিত শক্তির আদর্শধারাই আজ ক্ষমতার চেয়ারে বসে মুক্তিযুদ্ধের আখ্যানকে রিভিশন দিচ্ছে।
শুধু ‘স্বীকৃতি’ বাতিল নয়, এটা এক জাতির আত্মপরিচয় মুছে ফেলার একটা চক্রান্ত। নতুন অধ্যাদেশে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়ে আসলে এক প্রকার আইনি ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হলো দেশের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়টাকে। যেসব ব্যক্তি বন্দি অবস্থায় থেকেও জাতির মনোবল জিইয়ে রেখেছিলেন, যারা প্রবাসী সরকার গঠন করে কূটনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে যুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন—তাঁদের আজ অযথা বলে ঘোষণা করা হলো? এই যে ধৃষ্টতা, এ এক প্রকার রাষ্ট্রীয় অশ্লীলতা।
সোনা ব্যবসায়ী দুলা মিঞার পুত্র ইউনুস, ‘আমি চেয়ারে তাই আমিই সুপারম্যান’ ক্যাটাগরির ‘বীরত্ব’ দেখাতে গিয়ে আপনি আপনার শক্তির উৎস কোথায়, সেটা লুঙ্গি মাথায় তুলে ফেলার মতো করে এমনভাবে প্রকাশ করে ফেলেছেন যে তা আর মুখে বলার মতো অপেক্ষায় রাখেননি। আপনার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চালিকাশক্তি সেই পরাশক্তিগুলো যারা চায় না বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াক, যারা বঙ্গবন্ধুর নাম শুনলে আজও আঁতকে ওঠে, যারা চায় এই ভূখণ্ড আবার বিভক্ত হোক—কানাডা-মডেল ফেডারেশনে পরিণত হোক। কিন্তু ভুলে যাবেন না—এই দেশের নদী, মাটি, বাতাস এখনো মুক্তিযুদ্ধের শপথে জারিত। আপনি অধ্যাদেশ দিয়ে কাগজে মুছে দিতে পারবেন কিছু নাম, কিন্তু মানুষের হৃদয়ে রক্তে লেখা ইতিহাস আপনি ছিঁড়তে পারবেন না।
শত্রুর সংজ্ঞা আজ পরিষ্কার। সেটাকে আর রাখঢাক করার দরকার নেই। এই রাষ্ট্রযন্ত্রে যারা বসে আছে, তারা রাষ্ট্র নয়, তারা বাংলাদেশের আদর্শের বিরুদ্ধ একটা দখলদার চক্র—তাদের মুখোশ আজ খসে পড়েছে। আর মোহাম্মদ ইউনুস, আপনি এই ভাঙা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যা দেখছেন, সেটাই আপনার আসল চেহারা।
*আওয়ামীলীগ পেইজ থেকে)