দেশটিতে কয়েক বছর ধরে প্রচণ্ড খরা, আশঙ্কাজনক হারে কমেছে পশুর সংখ্যা. ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কৃষকরা, আদেশ অমান্য করলে জরিমানা ও পশু জব্দ
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মরক্কোয় এ বছর ঈদুল আজহায় কোরবানি না দিতে রাজকীয় ডিক্রি (সরকারি আদেশ) জারি করা হয়েছে। দেশটির ইসলাম ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ তৌফিক বুধবার (৪ জুন) রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদের জারি করা রাজকীয় ডিক্রিটি পড়ে শোনান। ডিক্রিতে রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ সাধারণ মানুষকে এ বছর কোরবানি না দেয়ার আহ্বান জানান।
রাজকীয় ডিক্রিতে বলা হয়, “আমরা সবসময় চেয়েছি আমাদের প্রজারা যাতে তাদের ধর্মীয় বিধান ও রীতি যথাযথভাবে পালন করতে পারেন। তবে বর্তমানে আমরা এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির মুখোমুখি, যা আমাদের কিছু ঐতিহ্যবাহী রীতি সাময়িকভাবে স্থগিত করতে বাধ্য করছে, যার মধ্যে কোরবানি প্রথাও রয়েছে।”
মরক্কোর সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে গত কয়েক বছর ধরে প্রচণ্ড খরা চলছে। এছাড়া আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে মরক্কো। যে কারণে পশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো— বেঁচে থাকা পশুসম্পদ রক্ষা করা এবং কৃষিখাতের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা।
সাধারণ মানুষ যেন এই সরকারি আদেশ অমান্য করতে না পারেন সেজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ও তদারকি বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া পশু পরিবহনের পথেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। কেউ আদেশ অমান্য করে পশু কোরবানি করলে তাকে বিপুল অর্থ জরিমানা এমনকি কোরবানির পশু জব্দ করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে।
দেশটির একটি কৃষি সংগঠনের প্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আম্মার জানিয়েছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত কৃষকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অনেকেই ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশু প্রস্তুত করে ক্ষতি পুষিয়ে নেবার আশায় ছিলেন। কিন্তু এখন কৃষকরা যদি এগুলো বিক্রি করতে না পারেন তাহলে আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন।
তিনি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কৃষক এবং সর্বস্তরের অংশগ্রহণে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে সোশ্যালে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন পোস্ট দেখে দেশটির জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, কেউ কোরবানি করলে জরিমানা হতে পারে এবং বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হবে। তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেছেন, এটি একটি ‘আহ্বান’। আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়।
তবে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে— আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়িতে হানা দিয়ে কোরবানির পশু জব্দ করছে। যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা যায়নি, তবে তা জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
মরক্কো সেন্টার ফর লিগ্যাল অ্যাওয়ারনেস-এর প্রধান আইনজীবী চোআইব লামসাহাল বলেন, “এই ধরনের সামাজিক গুজবের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা তখনই আইনের বলপ্রাপ্ত হয়, যখন সুনির্দিষ্ট আইনি বিধান দ্বারা তা সমর্থিত হয়।”