কাল পবিত্র কুরবানীর ঈদ। এই দিনটি ত্যাগ, সহমর্মিতা আর মানবতার মহিমা বহন করে। অথচ এ বছর লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকের কাছে ঈদ মানে নিঃস্বতা, বঞ্চনা আর বুকফাটা কান্না। ঈদের নতুন কাপড় নয়, তারা পেয়েছে লাঠিপেটা। বোনাস নয়, পেয়েছে চোখের পানি।
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও আশুলিয়ার শ্রমিকরা দিনের পর দিন কাজ করে যে মজুরি পাওয়ার কথা, সেটিও তাদের কপালে জোটেনি। ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে বোনাসের দাবিতে তারা যখন শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় দাঁড়ায়, তখন তাদের ওপর নেমে আসে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের খড়্গ। পুলিশের লাঠি, জলকামান আর কথিত সরকার সমর্থিত এনসিপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের হামলায় রক্তাক্ত হয় ঈদের প্রস্তুতি।
যাদের ঘামে তৈরি পোশাকে বিদেশি বিলাসিতা, রপ্তানি রিজার্ভে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আজ সেই শ্রমিকের ঘরে নেই ঈদের হালুয়া, নেই ছেলের জন্য পাঞ্জাবি, মেয়ের জন্য নতুন জামা। তারা শুধু দাঁড়িয়ে, বঞ্চনার দেয়ালে ঠেকা পিঠ নিয়ে।
আর জাতীয় গণমাধ্যম? চুপ। টিভির পর্দায় ঈদের বাজার, হালের নাচ-গান, আর তথাকথিত উন্নয়নের বুলিচর্চা। অনলাইন পোর্টালগুলো সেন্সরে বন্দী। সাংবাদিকরা জানেন, শ্রমিকের কষ্ট প্রচার করলেই হয়ত কাল তাদেরও জায়গা হবে গুমের খবরে।
এই পরিস্থিতি এক বৈধ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্ভব নয়। এটি সম্ভব এক দখলদার, অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর অধীনে। যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, যারা ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্র চালায়, যারা মত প্রকাশকে অপরাধ বানিয়েছে।
শ্রমিকের ঈদের আগের কান্না নিছক আর্থিক বঞ্চনা নয় এটা একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার নগ্ন প্রকাশ। এই ব্যর্থতা আমাদের সবাইকে আহত করে। ইতিহাস বলে, যখন শ্রমিক কাঁদে, তখন মাটির নিচে আগুন জন্ম নেয়। সেই আগুন ধ্বংস করে দেয় স্বৈরাচারের আস্তানা।
আজ তাই সময় শ্রমিকের পাশে দাঁড়াবার।আজ সময় সত্য বলার, প্রতিবাদ করার। এই ঈদ হোক বঞ্চিত মানুষের অধিকারের শপথের ঈদ। এই ঈদ হোক অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহসের ঈদ।