ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের সামরিক হামলার পর বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। একদিকে গাজায় মানবিক বিপর্যয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অস্থির। তার ওপর ইরানের ওপর ইসরাইলের যুদ্ধ ঘোষণা করে হামলা সেই অস্থিরতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে যদি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়খার হয়ে যেতে পারে। অথচ এই বিষয়টি বুঝতে পারছেন না মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম দেশগুলোর নেতারা। বিশ্বের অনেক নেতা এ বিষয় বুঝতে পেরেছেন। তারা উদ্বেগ, নিন্দা ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার ভোরে ইসরাইল জানায়, তারা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে।ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে দেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাগুলিও ছিল ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তু। অন্যদিকে, ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। হামলার পর ইসরাইল নিজ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে সম্ভাব্য ইরানি প্রতিশোধের আশঙ্কায়। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ হামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, শুক্রবার রাতে ইসরাইল একতরফাভাবে ইরানে হামলা চালিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই জড়িত নয়। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, ইরান যেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থ বা সেনা সদস্যকে লক্ষ্য না করে— এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত কঠোর।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, ইসরাইল-ইরান উত্তেজনায় অস্ট্রেলিয়া গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই ঘটনা ইতিমধ্যেই অস্থির একটি অঞ্চলকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে। আমরা সকল পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ও ভাষা পরিহার করে। তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই অস্থির পরিস্থিতি খুবই অপ্রত্যাশিত। এখানে ভুল হিসাবের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। এই অঞ্চল আর কোনো সামরিক অভিযান সহ্য করতে পারবে না।
জাপানের মন্ত্রিসভা মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, পরিস্থিতির অবনতি রোধে জাপান সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আমরা জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবরকম প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির নিন্দা জানাচ্ছেন মহাসচিব। বিশেষ করে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলার ঘটনায় তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনা চলছে, তখন এমন হামলা বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।
ওমান (ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্র) বলেছে, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের সরাসরি লঙ্ঘন। এটি একটি বেপরোয়া ও বিপজ্জনক উসকানি। ইসরাইল এই সংঘাতের দায় এড়াতে পারে না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা একতাবদ্ধ হয়ে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, জায়নিস্ট শাসকগোষ্ঠী আজ ভোরে আমাদের দেশে এক ভয়াবহ অপরাধ করেছে তাদের শয়তান ও রক্তাক্ত হাতে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই অপরাধের জন্য তারা কঠিন শাস্তি পাবে। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেবে না।