বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে তীব্র সমালোচনা উঠেছে। এই সফরে কোনো রাষ্ট্রীয় বা দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক কার্যক্রম না থাকলেও, জনগণের করের টাকায় বিলাসবহুল অবস্থানের পেছনে বিপুল ব্যয়ের অভিযোগ উঠেছে।
গত ৯ই জুন শুরু হওয়া এই সফরে ড. ইউনূস ও তার ৩৪ সদস্যের সফরসঙ্গী দল লন্ডনের অত্যন্ত ব্যয়বহুল হোটেল ডরচেস্টারে অবস্থান করেন। এতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা (২ লাখ ১০ হাজার ৩২৫ ব্রিটিশ পাউন্ড)। ৩৪ সদস্যের জন্য ৩৭টি কক্ষ ভাড়া করার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত তিনটি কক্ষ কাদের জন্য এবং কেন, এ নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ড. ইউনূসের জন্য সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল কক্ষটি ভাড়া করা হয়, যার দৈনিক ভাড়া ৬ হাজার ৪৫ পাউন্ড (প্রায় ১০ লাখ টাকা) মূল্যে ভাড়া করা হয়, যার মোট খরচ ৪ রাতের জন্য ২৪ হাজার ১৮০ পাউন্ড বা ৪০ লাখ টাকা। ৩৭টি কক্ষের জন্য এমন বিপুল ব্যয় জনগণের টাকার অপচয় বলে সমালোচকরা মনে করছেন।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভাড়ার কক্ষটির দৈনিক ভাড়া সাড়ে ৮ লাখ টাকা। সেটিও ৪ দিনের জন্য বুকিং দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, ড. ইউনূস ছাড়া ৩৭ জন সফরসঙ্গীর মধ্যে কে এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যার জন্য সাড়ে ৮ লাখ টাকার কক্ষ ভাড়া করতে হয়েছে? এ নিয়ে কোনো জবাব মেলেনি এখনও।
কূটনৈতিকভাবে লাভের ঘরে শূন্য
এই সফরে কোনো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের খবর পাওয়া যায়নি। ড. ইউনূস ব্রিটিশ রাজার কাছ থেকে একটি ব্যক্তিগত পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। এই সফরে তিনি বিএনপির পলাতক নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসবই ব্যক্তিগত কর্মসূচি। এতে দেশের জনগণ বা রাষ্ট্রের কোনো সুস্পষ্ট অর্জন নেই। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন, এই সফরে দেশ কীভাবে লাভবান হলো?
রাষ্ট্রীয় বিমানের পরিবর্তে অধিক খরুচে এমিরেটসে ভ্রমণ
আরেকটি বিষয় নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে, লন্ডনে বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইট থাকা সত্ত্বেও ড. ইউনূস ও তার বিশাল বাহিনী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিপুল খরুচে ফার্স্টক্লাস ও বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করেন, যার ভাড়া বাংলাদেশ বিমানের তুলনায় অনেক বেশি। দেশের ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার বাংলাদেশ বিমানের পরিবর্তে বিদেশি এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা চলে গেছে দেশের বাইরে, এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে দেশীয় বিমান সংস্থা ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় গৌরব প্রকাশের পাশাপাশি ব্যয় সংকোচনের প্রত্যাশা ছিল সবার।
জনগণের প্রত্যাশা ও সমালোচনা
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের বিদেশ সফরে মর্যাদা বিবেচনায় বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থানকে মেনে নিলেও, এই সফরের উদ্দেশ্য ও ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনগণের করের টাকায় ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত সফর জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। সমালোচকরা বলছেন, এ ধরনের ব্যয় দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব প্রকাশ করে।