অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১০ মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার, সেখানে চলতি বছরের ১৫ জুন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, রিজার্ভ কমেছে প্রায় ৮২ কোটি ডলার। অথচ এই সময়েই রেমিট্যান্স ও রফতানি খাতে এসেছে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি—প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ২৪.৫ শতাংশ এবং রফতানি আয় বেড়েছে ১০ শতাংশ। মাত্র ১১ মাসে এই দুই উৎস থেকে এসেছে অতিরিক্ত ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা।
তাহলে রিজার্ভ কমছে কেন?
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যালান্স অব পেমেন্ট (বিওপি) বিশ্লেষণ বলছে, বড় ধরনের ঋণ পরিশোধ, বিদেশি বিনিয়োগ, অনুদান ও ঋণপ্রবাহে স্থবিরতা এই ঘাটতির প্রধান কারণ। গত ১০ মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৩৭ কোটি ডলার, বিদেশি অনুদান কমেছে ১৮৬ কোটি ডলার এবং মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ কমেছে ১৩৬ কোটি ডলার। শুধু এই তিন খাত থেকেই আগের বছরের তুলনায় কম এসেছে ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
এই সময় আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার এবং আগের বছরের জমে থাকা বৈদেশিক ঋণ, সেবা ব্যয় ও এলসি পরিশোধেও রিজার্ভ থেকে ব্যয় হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, এই সময়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ঋণ সহায়তা না আসায় রিজার্ভে প্রত্যাশিত পুনরুদ্ধার ঘটেনি। তবে তিনি জানান, জুন মাসেই আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার কাছ থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অর্থ এলে রিজার্ভে খানিকটা উন্নতি হতে পারে।
জুনে আবারও রেমিট্যান্সে ভাটা
বছরজুড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক থাকলেও ২০২৫ সালের জুন মাসের প্রথম ১৪ দিনে রেমিট্যান্স কমে এসেছে ৩০ দশমিক ১ শতাংশ। এই সময়ে এসেছে মাত্র ১১৪৯ মিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের বছর একই সময়ে এসেছিল ১৬৪৪ মিলিয়ন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রিজার্ভ পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও তা এখনও তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট নয়, রিজার্ভ টেকসইভাবে বাড়াতে হলে **বিদেশি বিনিয়োগ, অনুদান ও বহুপাক্ষিক ঋণ প্রবাহ** বাড়াতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরী বলেন, “রিজার্ভ ক্ষয় এখন থেমেছে, তবে সেটি পুনরুদ্ধারে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। কেবল প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যানে সমাধান আসবে না।”