জেনিভা, সুইজারল্যান্ড, ১৬ইজুন ২০২৫ঃ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৯তম অধিবেশনে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক সোমবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণের সাম্প্রতিক আইন সংশোধনীর সমালোচনা করেছেন।
তুর্ক বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে অগ্রগতি দেখে আমি উৎসাহিত। কিন্তু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধকরণের আইন সংশোধনী সংগঠন, মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতাকে সীমিত করে।” তিনি বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য দ্রুত চুক্তির আশাও ব্যক্ত করেন।
তবে, তুর্কের বক্তব্যে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সংলাপে অংশগ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি, যদিও তিনি দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের সমালোচনা করেছেন। এর বিপরীতে, জাতিসংঘের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস গত ৪ জুন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে রাজনৈতিক দলের নয়, সব জনগণের অংশগ্রহণ।” এই বক্তব্য দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের তীব্র নিন্দার পর। লুইসের বক্তব্যের দুই সপ্তাহ পর তুর্কের এই মন্তব্য এসেছে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে বিবিসের এক সাক্ষাতকারে তুর্ক বলেছিলেন, গত জুলাইয়ের আন্দোলনে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ থেকে নিবৃত্ত করেছিলেন, যা বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছিল। এর প্রায় ৫ মাস পরে প্রথম, মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশ বিষয়ে কথা বললেন ভলকার তুর্ক।
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, তুর্ক বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ ও উচ্চ শুল্ক আরোপের প্রভাব নিয়ে সতর্ক করে বলেন, “এটি বাংলাদেশের মতো রপ্তানিমুখী দেশগুলোর জন্য বিধ্বংসী হতে পারে। উচ্চ শুল্ক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পুষ্টিকর খাদ্যের সুযোগ কমিয়ে দেবে এবং নিম্ন-বেতনের উৎপাদন খাতে কর্মরত নারীদের ওপর লিঙ্গ বৈষম্যের প্রভাব বাড়াবে।”
তিনি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জনগণের অরক্ষিত অবস্থা এবং দরিদ্রতম মানুষদের প্রতি “অগ্রাধিকারহীন ক্ষতি”র প্রবণতার নিন্দা করেন। তুর্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও মানবাধিকার রক্ষায় সংলাপ ও সংস্কারের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানান।