আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গত বছরের জুলাই-আগস্টের তথাকথিত আন্দোলন নিয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচন করেছেন অনলাইন টকশোতে। ভার্চুয়ালি কয়েকটি টকশোতে তিনি অংশগ্রহণ করছেন গত কিছুদিন ধরে। যার মধ্যে গতরাতে দুটি পৃথক টকশোতে তিনি জুলাই-আগস্টের সহিংসতা ও আন্দোলনের নেপথ্যের কিছু তথ্য তুলে ধরেন। এই আন্দোলনের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র, গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কথাও উল্লেখ করেন। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট।
প্রথমত, ব্যারিস্টার নওফেল জানান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জুলাইয়ের শুরুতেই সরকারকে এই ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের বিষয়ে সতর্ক করেছিল। কিন্তু তার সরকার এই আন্দোলনের অর্থপ্রবাহ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, গোয়েন্দা সংস্থার কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, নওফেল উল্লেখ করেন, সরকারের ভেতরেরই একটি পক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছিল। এছাড়া, সরকারি কোনো সংস্থা থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ায় আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা তাদের দাবি আদায়ের নামে মূলধাররার গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমকে সুকৌশলে ব্যবহার করে। সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো সত্ত্বেও বৈঠকের প্রস্তাব এড়িয়ে গিয়ে তারা নিজেদের সুসংগঠিত করে আন্দোলন উস্কে দেয়।
আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনজন মন্ত্রী/নেতাকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, যার মধ্যে তিনিও ছিলেন। তার পর্যবেক্ষণ ছিল, আন্দোলনকারীরা সুপ্রশিক্ষিত জঙ্গি। তিনি বলেন, “হলি আর্টিজানের জঙ্গিরা যদি এনএসইউ থেকে আসে, তাহলে এই জঙ্গিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে।” এই মন্তব্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট করেছিলেন।
তিনি এটাও বলেন যে, আলোচনা করতে আসা ছাত্র-সমন্বয়করা সরকারি গোপন গোয়েন্দা তথ্য আগে থেকেই জানত, এবং তারা শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নমনীয়তা দেখায়নি। খুব বড় একটা শক্তি তাদের পেছনে ছিল, ফলে ছাত্র সমন্বকরা অবিচল ছিল তাদের লক্ষ্যে। দাবি পুরণ করা মাত্রই, তারা নিজেদের দাবী পরিবর্তন করেছে। এতে স্পষ্ট হয়, শিক্ষার্থীদের চাকরির অধিকার বা হত্যার বিচার চাওয়া আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিল না।
শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেল জানান, জুলাইয়ের ১৭ তারিখের পর ঢাকায় যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা দিয়ে ৬ লাখ নতুন সিম (বাহক) প্রবেশ করে, যা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর অবহেলা বা নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে এই প্রবেশ সম্ভব হয়।
টকশোতে নওফেল বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে গেলে চিকিৎসকরা তাকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বলেন। চিকিৎসকদের প্রাথমিক মূল্যায়ন ছিল, আহতরা সুপ্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী বা জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই আন্দোলন ইউনূস সেন্টারের কর্মকর্তা লামিয়া মোর্শেদের নেতৃত্বে সমন্বিতভাবে পরিচালিত হয়েছিল বলে নওফেলের অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সুস্থ ও জনমানুষের রাজনীতির ধারক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কিংবদন্তী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান তিনি। জুলাই আন্দোলন তিনি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
তার এই বক্তব্য জুলাই আন্দোলনের পেছনের ষড়যন্ত্র ও সমন্বয় নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।(বিডিডাইজেস্ট)