।। জয় আদিত্য।।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শান্তি সূচকের অবনতি এমন একটি বিষয় যা গভীর উদ্বেগের। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) ২০২৫ সালের গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান এক বছরে ৩৩ ধাপ পিছিয়ে ১২৩তম স্থানে নেমে এসেছে। এটা শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার এক কঠোর প্রতিফলন।
এ অবস্থায় আমার মনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জাগে—যার নেতৃত্বে দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় না, সে কীভাবে শান্তিতে নোবেল পায়?
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই গৌরবের। তিনি মাইক্রোক্রেডিট এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করলে স্পষ্ট হয়, শান্তিতে নোবেল প্রাপ্ত এই নেতার শাসনামলে দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে।
শান্তির সূচকের এই বিশাল পতন একদিকে যেমন আমাদের শাসন ব্যবস্থার ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত, অন্যদিকে তা সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ঘাটতিরও পরিচায়ক। দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা, মব লিঞ্চিং, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও দমন-নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। মানুষের নিরাপত্তায় সরকার ও প্রশাসন যে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবে, সেটি আমরা যথাযথভাবে দেখছি না।
নোবেল পুরস্কার একটি ব্যক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, কিন্তু দেশের শান্তি ও সুশাসনের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে দরকার সবার অধিকার রক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিচারের সুষ্ঠু ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা। এ ক্ষেত্রে সরকার এবং নেতৃত্বের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যখন দেশের সাধারণ মানুষ নিজের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার নিয়ে অনিশ্চিত, তখন ‘শান্তিতে নোবেলজয়ী’ নামের আড়ালে শান্তির নামকে মিথ্যা আড়াল করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক সম্মান যদি দেশের ভেতরের বাস্তবতা থেকে দূরে থাকে, তবে সেটি কেবল এক ধরণের সাজানো ফ্রেম মাত্র।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং মানুষকে বিচারের সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। নোবেলজয়ী নেতৃত্বের এই দায়িত্ব পালনে ঘাটতি থাকলে, দেশের শান্তির সূচক আরও অবনতির দিকে যাবে।
শেষ পর্যন্ত শান্তি কাগজে বা পুরস্কারে নয়, মানুষের জীবনযাত্রায় পরিলক্ষিত হতে হবে। “যার নেতৃত্বে দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় না, সে কীভাবে শান্তিতে নোবেল পায়” – এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের সবার।
লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক