জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ৫৯তম অধিবেশনে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সংখ্যালঘু নির্যাতন, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং নারী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
গত ৩০শে জুন অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে বেসরকারি সংগঠন টুমুকু ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল ইউনিয়ন একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করে, যা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির চিত্র তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ক্ষমতায় বসা ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ, ও খ্রিস্টানদের ওপর হামলা, মন্দির ও বাড়িঘরে ভাঙচুর এবং সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইউনিটি কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রায় ৫৬০টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। সরকার এসব ঘটনার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং এসব ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ চড়িয়েছে।
নারীদের প্রতি সহিংসতাও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে নারী ও শিশুদের ওপর ৩৬২টি সহিংস ঘটনার মধ্যে ৯৩টি ধর্ষণ, ২৫টি দলগত ধর্ষণ এবং ৪টি ধর্ষণজনিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, গ্রেপ্তার এবং হুমকির ঘটনা বেড়েছে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টুমুকু ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল ইউনিয়ন-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পেয়েছে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনা দেশের শাসনব্যবস্থাকে আরও জটিল করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের স্পিকার প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং বাংলাদেশ সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
এই অভিযোগগুলো বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবনতির ইঙ্গিত দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান চাপ এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে।