।।মনজুরুল হক।।
৫ আগস্ট, ২০২৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে অবৈধ দখলদার ইউনূস সরকার ক্ষমতা দখল করার পর থেকে হিযবুত-তাহরীরের মতো উগ্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের অধীনে দেশে অবাধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সরকারের সুরক্ষায় হিযবুত-তাহরিরের সাথে যোগ দিয়েছে অন্যান্য উগ্রবাদী ইসলামী দল। ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বাংলাদেশজুড়ে মব সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জামায়াতে ইসলামি ও জিহাদি ছাত্ররা ‘ইসলামিক রেভল্যুশনারি আর্মি’-এর ব্যানারে একটি সশস্ত্র মিলিশিয়া গঠনের পরিকল্পনা করায় বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। যা কেবল বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাই নয় বরং প্রতিবেশী ভারত এবং বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।
📍
পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইসহ তুর্কি সমর্থন, লজিস্টিক, সামরিক সাহায্য এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন এবং জর্জ সোরোসের অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে ‘ইসলামিক বিপ্লবী সেনাবাহিনী’ গঠন শুরু করে। পাকিস্তানি নাগরিক বা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য আগের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিলের সুযোগে আইএসআই, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর জঙ্গিদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি ৫ হাজারেরও বেশি প্রশিক্ষিত বিহারীকে বাংলাদেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছিল। জুলাইয়ের শেষের দিকে তাদের সংখ্যা ৫০,০০০-এ পৌঁছেছিল। বিস্ফোরক এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে তারা পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ শুরু করে এবং জেল ভেঙে সন্ত্রাসীদের মুক্ত করে। পুলিশের অস্ত্রাগারে ব্যাপক লুটপাট করে যার মধ্যে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, গ্রেনেড, রাইফেল এবং এসএসএফ-এর অত্যাধুনিক AK-47 ও ছিল।
📍
এরই মধ্যে সরকার তুরস্ক থেকে Bayraktar TB2 ড্রোন, Otokar Kobra ভেহিক্যালস IMVs, মাইন বিধ্বংসী MRAP, হালকা সাঁজোয়া যুদ্ধ যান- RN-94 সাঁজোয়া অ্যাম্বুলেন্স, TRG-300 Tiger MLRS এবং TRG-230 সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল SSMs কিনেছে সরকার, এবং এই ‘বেঁচা-কেনা’র মধ্যেই একাধিক জঙ্গি ডিল হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। এই ধরনের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা বাংলাদেশের এই নতুন ইসলামপন্থীদের সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদী নীলনকশা।
📍
বাংলাদেশের সন্ত্রাসের রাজত্ব: দক্ষিণ এশিয়ার পরবর্তী ইসলামিক কেন্দ্র?
“বাংলাদেশে রাজনীতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। অর্থনীতির পতন হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা চরম বিপর্যয়ের মুখে। আইনের শাসন সংগঠিতভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে, আটক রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সাংবাদিকরা আদালতে জামিন পাচ্ছেন না…. বাংলাদেশে চলছে অস্তিত্বের সংকট। ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে এর উত্থানের জন্য যে সমস্ত মূল্যবোধ ছিল তা একটি সাংবিধানিক বৈধতাহীন শাসনব্যবস্থা দ্বারা পরিকল্পিতভাবে ত্যাগ করা হচ্ছে।”— সৈয়দ বদরুল আহসান, প্রবীণ বাংলাদেশী সাংবাদিক এবং ভাষ্যকার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪।
📍
সৈয়দ বদরুল আহসানের এই ভাষ্য ৭ মাস পরে এসে আরও ঘণীভূত হয়েছে। এখন সংকটগুলো পেঁকে উঠেছে। ৭১-এর মহান স্বাধীনতা অর্জনের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, তাদের উত্তরসূরিদের ওপর সুনির্দিষ্ট ছক কষে ঘোষণা দিয়ে সদর্পে নিমূলের চেষ্টা হচ্ছে। আর সেসব করা হচ্ছে দেশের প্রায় সকল সশস্ত্র বাহিনী, সুশীল সমাজ, বিদ্ব্যৎজনদের প্রকাশ্য ও মৌন সমর্থন নিয়ে।
📍
আওয়ামী লীগ আমলে যে র্যাডিক্যাল ইসরামি গোষ্ঠীগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন নেতৃত্ব এখন তাদের উৎসাহিত করছে। তার মধ্যে রয়েছে; হিযবুত-তাহরীর, তৌহিদী জনতা, হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।
📍
২০২৪ সালের আগস্টের পর ইউনূসের সরকার কনভিক্টেড ইসলামী সন্ত্রাসীদের মুক্তি দিয়েছে, সংখ্যালঘুদের (প্রধানত হিন্দুদের) বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা ঘটানোর জন্য কথিত জিহাদি জনতাকে রাস্তায় নামিয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ২,২০০ টিরও বেশি সহিংসতার ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।
📍
এই উগ্র ইসলামী সংগঠনগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ইসলামী খেলাফত। যদি বাংলাদেশে এই ইসলামী দখল সফল হয়, তাহলে দেশটি আরেকটি ইসলামী সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হবে — যেমন তালেবানের অধীনে আফগানিস্তান। এবং নতুন সন্ত্রাসী নেতা আহমেদ হুসেইন আল-শারার অধীনে সিরিয়া।
📍
৭ মার্চ, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী হিযবুত তাহরীরের হাজার হাজার সদস্য পুলিশ ব্যারিকেড উপেক্ষা করে ঢাকার রাস্তায় মিছিল করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের পরিবর্তে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে। মিছিলে উপস্থিত জনতা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে — পাথর ছুঁড়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ৭ মার্চ ২০২৫ সালে ঢাকায় ‘খিলাফতের জন্য মার্চ’ সমাবেশ। HuT ক্যাডারদের অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা, যেমন আসিফ নজরুল, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং মেহফুজ আলম দ্বারা সমর্থিত। HuT-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন হিসাবে পরিচিত একজনকে সচিব নিযুক্ত করা হয়েছে।
📍
কাউন্টার এক্সট্রিমিজম প্রজেক্ট?
“হিযবুত-তাহরির একটি আন্তর্জাতিক ইসলামপন্থী আন্দোলন যা মুসলিমদের এক ইসলামী খেলাফতের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করতে চায়। হিযবুত-তাহরির সদস্যরা একাধিক দেশে সহিংস কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত। এই দলটি কমপক্ষে ১৩টি দেশে নিষিদ্ধ, যার মধ্যে অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশও রয়েছে। “
হিযবুত-তাহরীর শাখা ৪০ টিরও বেশি দেশে কাজ করে এবং বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সংগঠিত হচ্ছে।
📍
ইউনূসের শাসনামলে ইসলামপন্থী কট্টরপন্থী এবং দোষী সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ৩১শে আগস্ট, ২০২৪ তারিখে কারাগার থেকে মুক্তি পান বাংলাদেশে ইসলামী শরিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা আরেকটি দল হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক।“
“বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে। হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালে ঢাকা অবরোধ করে এবং ১৩ দফা পেশ করেছিল। ইউনূসের শাসনামলে এই গোষ্ঠীটি বর্তমানে বাংলাদেশে আরও বেশি উগ্র দাপটের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।“
📍
ইউনূসের সরকার আল-কায়েদা-অনুমোদিত সন্ত্রাসী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এর প্রধান জসিমুদ্দিন রাহমানিকেও মুক্তি দেয়। ব্লগার রাজিব হায়দারকে হত্যার দায়ে কারাবন্দী রাহমানিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। এবিটি স্লিপার সেলের সাহায্যে বাংলাদেশে একটি জিহাদি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
হাসিনা সরকার ২০১৫ সালে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করলে এবিটি পরে নিজেদেরকে ‘আনসার আল-ইসলাম’ নামে পুনঃনামকরণ করে এবং ২০১৭ সালে আবার নিষিদ্ধ করা হয়।
📍
জামায়াতের নেতৃত্বে আর্মড কাউন্টার এনফোর্সমেন্ট?
৩১ মার্চ, ২০২৫ ‘ওয়াশিংটন এক্সামিনার’-এ মাইকেল রুবিন এক রিপোর্টে বলেন-“ বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামিকে বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করুন”।
৫ আগস্ট বাংলাদেশে সহিংস বিক্ষোভকারীদের কারণে দেশটির দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতার কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর (তিনি কখনও পদত্যাগ করেননি) বিক্ষোভকারীরা মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করে।
📍
বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মকাণ্ডকে বৈধ আন্দোলন বললেও বিদেশীদের স্বার্থ এবং বাইরের সমর্থন ভোগকারী রাজনৈতিক দলগুলো দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে ইন্ধন দিয়েছে যাদের অন্যতম ছিল জামায়াতে ইসলামি।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জামায়াতে ইসলামী একটি কট্টরপন্থী ইসলামপন্থী দল, যা সন্ত্রাসবাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জামায়াতে ইসলামীর শিকড় ১৯৪১ সাল থেকে শুরু। মুসলিম ব্রাদারহুড তার প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীকে পশ্চিমা এবং উদার গণতন্ত্র উভয়কেই বাতিল করে আরও রক্ষণশীল ইসলামপন্থী দেশ গড়তে চায়।
📍
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, জামায়াতে ইসলামী বিশেষভাবে নৃশংস ছিল। এরা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যায় ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল, যার ফলে ৩০ লক্ষেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল। এই কারণে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের যুদ্ধাপরাধী বলে মনে করা হয়। অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি দলের পরে জামায়াতে ইসলামী দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল যারা তাদের অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, জামায়াতে ইসলামি এখনও পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি থেকে সক্রিয় সমর্থন পাচ্ছে।
📍
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে মুহাম্মদ ইউনূস ‘যুদ্ধের মধ্যে’ রয়েছেন! ১,০০০ এরও বেশি সাংবাদিককে কারারুদ্ধ করেছেন, ডজন ডজন সাংবাদিকের নামে হ/ত্যা মামলা করেছেন যাতে তিনি জবাবদিহিতা ছাড়াই শাসন করতে পারেন। শেখ হাসিনার সাথে তার নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক বা আদর্শের কারণে হোক তিনি সারা বাংলাদেশে ইসলামি গোষ্ঠীগুলোকে সন্ত্রাসবাদ ছড়াতে দিয়েছেন এবং স্থানীয় আল-কায়েদা সহযোগীদের কারাগার থেকে বের করে দিয়েছেন। ইউনূস এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সমর্থনে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে।”
📍
মাইকেল রুবিন রিপোর্টে আরেও বলেন- আমেরিকান নীতিনির্ধারক এবং কূটনীতিকরা সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিবৃতি দেন, তবে জামায়াতে ইসলামি যে আদর্শিকভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত সেটি জোরালোভাবে সামনে আনেন না।“
তিনি আরও বলেন- “জামায়াতে ইসলামি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। পররাষ্ট্র দপ্তরের উচিত জামায়াতকে একটি বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশ ১৩২২৪ এর অধীনে ট্রেজারি সচিবেরও এই গোষ্ঠীর সম্পদ এবং সম্পত্তি চিহ্নিত করে বাজেয়াপ্ত করা উচিত। বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য দায়ী এবং আল কায়েদাকে শক্তিশালী করার জন্য দায়ী একটি গোষ্ঠীকে সাধারণ রাজনৈতিক দল ভাবার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর উচিত জো বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মত অবহেলা এবং নির্বুদ্ধিতা না করে জামায়াতে ইসলামিকে হামাস বা আল কায়েদার মতো মারাত্মক এবং আদর্শিকভাবে পরিচালিত একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আদলে বিচার করা।“
📍
রঙ্গমঞ্চে ‘খলিফা’ এরদোগানের তুরস্কঃ
তুরস্ক খুব দ্রুত ইসলামী বিশ্বে তার প্রভাব বিস্তার করছে। ‘নব্য-উসমানী’ প্রেসিডেন্ট এরদোগান মহাদেশজুড়ে ইসলামবাদের এক নতুন ঢেউ তুলে ধরছেন। দেশটি এখন দক্ষিণ এশিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে বিশেষ করে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে।
২০১১ সালে প্রায় ৮০০,০০০ সক্রিয় এবং সংরক্ষিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়ে তুর্কি সেনারা আজ কমপক্ষে ১১টি বিদেশী দেশে অবস্থান করছে—যেমন সিরিয়া, ইরাক, কাতার, উত্তর সাইপ্রাস, বসনিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো, লিবিয়া, সুদান, সোমালিয়া এবং আজারবাইজান। গত বছরই, তারা চারটি দেশের সাথে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ও সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে—ইরাক, সোমালিয়া, বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়া। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তুরস্ক ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সাথে নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি শুরু করেছে।
📍
দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য তুর্কি হুমকিঃ
এই প্যান-ইসলামবাদী এবং সম্প্রসারণবাদী তুরস্ক দক্ষিণ এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে, তাদের নব্য-সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্পের জন্য একটি পাকাপোক্ত স্থান তৈরি করার জন্য রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভেদকে কাজে লাগানোর আশায়। বাংলাদেশ তুর্কি কর্মকর্তাদের ব্যাপকভাবে আদর-আপ্যায়ন করছে যারা ২০২৫ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্লজ্জভাবে তুরস্ক থেকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও খাদ্য সাহায্য চেয়েছে। তুরস্কের দেওয়া বায়রাক্তার ড্রোন পেয়ে তা দিয়ে ভারতীয় সীমান্তে ডেমোনেস্ট্রেশন করে এক ধরণের শক্তিমত্তা দেখাতে চেয়েছে।
📍
বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই তুর্কি সামরিক পণ্যের চতুর্থ বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে এবং Bayraktar TB2 UCAv কিনেছে যার বেশিরভাগই ইউক্রেন, সিরিয়া, ইথিওপিয়া, বুরকিনা ফাসো, মালি এবং আজারবাইজানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলিতে বিক্রি করা হয়েছে।
📍
সর্বশেষ বিপদাশঙ্কাঃ
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গা তরুণদের অনেকে ‘জিহাদ’ ও ‘যুদ্ধ’ করতে প্রস্তুত হচ্ছে। উখিয়া ক্যাম্পে এক যুবক বলেন, “আমাদেরকে যুদ্ধ করে নিজ দেশে স্বাধীনতা অর্জন করতে বলতেছে আরকি। সবাই জিহাদ করার জন্য তৈয়ার। এটার জন্য সবাই একতালে আরসা, আরএসও- দুনো দল (দুই দলই) সবাই মিলে ভালো কাজ করতেছে।”
📍
ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন রোহিঙ্গারা স্বীকার করেছেন যে, ক্যাম্পে অন্তত চারটি সংগঠন ‘সশস্ত্র বিদ্রোহ’, ‘জিহাদ’ বা ‘যুদ্ধের’ জন্য তৈরি হয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়মিত ঘরোয় বৈঠক এবং আলাপ আলোচনা হয়।
📍
গোষ্ঠীগুলো হলো আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামিক মাহাজ এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)।
📍
দুদিন আগে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট (নং ৫৮৬) ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
তিনজনের পাসপোর্টের বিবরণ অনুযায়ী তারা পাকিস্তান আর্মি মেডিক্যাল কোর-এর কর্মকর্তা বলে দাবি করা হচ্ছে, এই মেডিক্যাল কোরের লোজনের ক্সবাজারে কোনও কাজ থাকার কথা নয়। তারা বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তাদের ও ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের অভ্যর্থনায় বাংলাদেশে অবতরণ করেন।
এই তিনজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা হলেন-১.ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাদিম আহমেদ। ২. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ তালহা ও ৩. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঊদ আহমেদ রাও।
ওই পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের নথিপত্র ও পাসপোর্ট ইস্যু বেশ বিস্ময়কর! ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাদিম আহমেদের পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে এবছরের ৩০ এপ্রিল, ব্রিগেডিয়ার মুহাম্মদ তালহার পাসপোর্ট ইস্যু হয় ২৬ মে, এবং ব্রিগেডিয়ার সাঊদ আহমেদ রাওয়ের পাসপোর্ট ইস্যু হয় ২৯ মে।
তিনটি পাসপোর্টই ব্রান্ড নিউ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, যেগুলোর পাতাগুলোতে কোনো স্ট্যাম্প বা অন্য চিহ্ন নেই। এতে করে ইঙ্গিত দেয় যে এগুলো ‘বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে’ ইস্যু করা হয়েছে। এই তিন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের সদর দপ্তর কক্সবাজারের কাছে রামু সফর করবেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত বাংলাদেশি মেজর জেনারেল মন্তব্য করেছেন: “এই তিনজন নিঃসন্দেহে আন্ডারকভার। না হলে তারা রামু সেনানিবাসে কেন যাবেন?”
📍
অর্থাৎ আমেরিকার ‘সন্ত্রাসবাদকে নির্মূলকরণ, ভারতের ‘অ্যাক্ট অব ওয়ার’, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন নিয়ে পিকনিক মোড, সেনাপ্রধানের আল্টিমেটাম, একটার পর একটা পিলে চমকানো হ/ত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে জনগণকে ক্যামোফ্লেজ করা, পশ্চিমা বিশ্বের ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচনের পরামর্শ, এনসিপি’র শ্যাডো বিরোধীতা, একের পর এক লুটপাট-দূর্নীতির ঘটনার উন্মোচন, প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অভূতপূর্ব ইন্টেরিম চিফের সঙ্গে সাক্ষাতের ডামাডোলে দেশে কি বড় ধরণের কিছু ঘটতে যাচ্ছে? যা এতটাই বিশাল যাতে করে দেশের অস্তিত্বই বিপন্ন হতে পারে? আলামত তা-ই বলছে!
………………………
তথ্য সূত্রঃ
১। তুর্কি সাংবাদিক উজায় বুলুত, গেটস্টোন ইনস্টিটিউটের একজন বিশিষ্ট সিনিয়র ফেলো। ২১ মার্চ, ২০২৫
২। aei.org ওয়াশিংটন এক্সামিনার, ৩১ মার্চ, ২০২৫
৩। weeklyblitz.net ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
৪। মনোহর পারিকর, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
৫। কাঞ্চন লক্ষণ দিল্লি-ভিত্তিক একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
৬। বিবিসি নিউজ বাংলা, ২৭ জুন ২০২৫
ছবি সূত্রঃ গুগল