বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছে যে বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভিত্তিহীন ১৮ সেকেন্ডের তথাকথিত অডিও ক্লিপ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে একটি অসত্য ও বিকৃত প্রতিবেদন প্রচারের বিষয়টি চরম দুর্ভাগ্যজনক, অনভিপ্রেত ও অকল্পনীয়। যা বিবিসির মতো বিশ্বমানের সংবাদ সংস্থার কাছে কেউ প্রত্যাশা করে না।
অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূসের সরকারের অধীনে বাংলাদেশের চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস সম্প্রতি ৩৫ মিনিটের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেটাকে তথাকথিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ সেখানে উদ্দেশপ্রণোদিতভাবে ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিত্তিহীন অডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়েছে। যেটাতে বোঝানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের দমন করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে ভিডিওতে উপস্থাপিত তথ্যে নিরপেক্ষতা বা গ্রহণযোগ্যতার চেয়ে পক্ষপাতের ছাপ স্পষ্ট এবং এটি বিবিসির নিজস্ব সাংবাদিকতা নীতিমালারও লঙ্ঘন।
এই ভিত্তিহীন অডিও ক্লিপের কোনো প্রাপকও নেই। অডিওটি সত্যি হলে তার প্রাপকও সুনির্দিষ্ট কেউ হতো। জননেত্রী শেখ হাসিনার মানহানি করার জন্য অডিওটি বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের যোগসাজশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি বিবিসি যে অডিও ফরেনসিক ফার্মের মাধ্যমে এটির সত্যতা তদন্ত করেছে, তারাও শতভাগ নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি ক্রস চেক করার জন্য এখানে বিপরীত ভাষ্য অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষের কারও বক্তব্য তুলে ধরা হয় নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতির ইতিহাস গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। এ কারণেই তিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। তিনি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি লাশের রাজনীতি বা খুনের রাজনীতি কখনো করেননি। করেননি বলেই তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার রাজনীতির মূলমন্ত্র হলো জনকল্যাণ। গণমানুষের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কখনোই এ ধরনের নির্দেশনা দেননি। বরং তিনি ঐ আন্দোলনের সময়ও শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এই প্রতিবেদনে অভিযোগের উৎস হিসেবে সরকারের আজ্ঞাবহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারঘনিষ্ঠ প্রসিকিউটরদের বেছে নেওয়া হয়েছে, যাদের অতীতে মানবাতাবাদী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করার ইতিহাস আছে।
দেশবাসী অবগত আছে, হাইকোর্টের প্রদত্ত একটা রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে প্রচলিত কোটার সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। যেহেতু রায়টি হাইকোর্ট প্রদান করেছিল সেহেতু বিষয়টি বিচার বিভাগের এখতিয়ারে থাকায় সরকার এটিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেছিল এবং শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনা করতেছিল। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী দেশি-বিদশি গ্রুপ ষড়যন্ত্রের জাল বুনে ফেলে। এই আন্দোলনকে ঘিরে তারা সন্ত্রাস ও ধ্বংসলীলার ছক কষে ফেলে। পাকিস্তানি মদদপুষ্ট উগ্র-সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রাজধানীতে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করবে। বিভিন্ন সূত্রে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং সরকারি ভবন ও অফিসে পরিকল্পিতভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করবে, কেআইপিগুলোতে হামলা হবে, কারাগার থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বের হয়ে মানুষ হত্যা করবে, কারাগার আক্রমণ করে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়া হবে প্রভৃতি এবং পরবর্তীতে এসব ঘটনা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। এসব জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ; যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলার অপচেষ্টা চলছিল। এ বিষয়গুলো বিবিসির প্রতিবেদনে উপেক্ষিত। আবার জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভের সময় পুলিশের ওপর হামলা, ৪৫০-এর অধিক থানায় হামলা ও অস্ত্র লুট, জেল ভেঙে সন্ত্রাসীদের বের করে আনা, অস্ত্র লুট ও একাধিক প্রাণহানির ঘটনাগুলো বিবিসির প্রতিবেদনে উপেক্ষিত। এমনকি শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল—যা থেকে পরিষ্কার হয় যে সহিংসতার দায় শুধুমাত্র তার নির্দেশের ওপর চাপানো একদমই অযৌক্তিক।
বিবিসি বাংলারই একটি ভিডিও প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত হিযবুত তাহরীরের একজন নেতা স্বীকার করেছিলেন যে, সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে তারা সহিংসতায় অংশ নিয়েছেন—যা শেখ হাসিনার দাবির পক্ষে প্রমাণ সরবরাহ করে যে, এই বিক্ষোভে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সম্পৃক্ততা ছিল; অথচ বিবিসির এই প্রতিবেদনে তা অনুপস্থিত।
সর্বোপরি বিবিসির এই প্রতিবেদন, বানোয়াট তথাকথিত অডিও ক্লিপ নির্বাচন এবং তথ্য উপস্থাপনা পক্ষপাতদুষ্ট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার মূল নীতির লঙ্ঘন। অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার এটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুত করেছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবাদ সংস্থা এই অশুভ চক্রের ফাঁদে পা দেবে, যা আমাদের একদমই কাম্য ছিল না।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।তারিখ: ৯ জুলাই ২০২৫