।। হামিদ মোহাম্মদ।।
শেখ হাসিনার অডিও ফাঁস এবং প্রচার করে বিবিসি কিছু মানুষের বাহবা কুড়াচ্ছে, আবার কিছু মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জানামতে, বিবিসি সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা সংকটে সুবিধাবাদী অবস্থান নেয়ায় তার জুড়ি নেই। এবারও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে সন্দেহজনক অবস্থান নিয়েছে। তার প্রমাণ,শেখ হাসিনার ফোনালাপের অডিও রেকর্ড ফাঁস করা। যারা মনে করেন দারুন করেছে বিবিসি, তাদের জন্য ইতিহাসকে মনে করিয়ে দিতে চাই।
১. শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। দায়িত্বে থাকাকালে ২০২৪এর জুলাইয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারিদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।নিদের্শের অডিও রেকর্ড ফাঁস করা হয়েছে।যদিও যথেষ্ট প্রমাণ নেই,২০১৬ সালের হলি আর্টিজানে‘জঙ্গি’দের ঘটনা বলে অনুমিত। হলি আর্টিজানের হউক আর ২০২৪ জুলাইয়ে হউক এই নির্দেশ তো তাঁর দায়িত্বপালনের অংশ। তিনি দেশ, জাতি ও জাতীয় সম্পদ রক্ষার শপথ নিয়ে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জানমাল ক্ষতির কোনো মুহূর্তে তিনি এই নির্দেশ দিতেই পারেন। এটা তাঁর শপথের অংশ। না-দিলে শপথভঙ্গের অপরাধে অপরাধী হতেন তিনি। কিন্তু সেনাবাহিনি তাঁদের শপথ রক্ষা করেনি। সেনাবাহিনি বেঈমানী করেছে, এটা-ই প্রমাণিত তো সত্য।
২. ইতিহাসে যারা এই রকম বেঈমানী করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতির ক্ষতি করেছে তার কয়েকটি উদহরণ দিচ্ছি।
ক. প্রথমেই আমাদের দেশের উদাহরণ দিচ্ছি। ১৭৫৭ সালে বাংলার নবাব সিরাজ উদ-দৌলার আদেশ অমান্য বা বেঈমানী করে ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের পা দিয়ে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর যুদ্ধে তার সেনাবাহিনিকে বিরত রাখে। নবাব পরাজিত হন। এতে প্রায় ২শ বছর উপমহাদেশ ব্রিটিশ উপনিবেশ হয়ে পরাধীন থেকেছিল। এ জন্য মীরজাফর ইতিহাসে ঘৃণিত ব্যক্তি, পরাজিত হয়ে জীবন বিসর্জন দিলেও সিরাজ নন্দিত ইতিহাসে বীরপুরুষ।
খ. গত শতাব্দীর নব্বই দশকে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়। সোভিয়েতভুক্ত দেশসমূহ ও রাশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে সোভিয়েত জনগণের একাংশ আন্দোলনে নামে। আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করলে তখনকার সোভিয়তে প্রেসিডেন্ট গর্বাচভ সেনাবাহিনিকে আন্দোলন দমাতে গুলির আদেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। যার পরিণতি সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র সফল হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য এখন বিশ্বে এক চেটিয়া। অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভাঙার জন্য গর্বাচভ ইতিহাসে বিলীন হয়ে গেছেন। এর পরণতি মার্কিন ও তার মিত্র সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরান, প্যালেস্টাইনসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশ ও জাতিসমূহকে ধ্বংস করছে ও এদেশগুলোতে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে অবিরাম লিপ্ত। বাংলাদেশসহ আরো বিভিন্ন দেশে থাবা মেলে আছে ছোঁ মারার জন্য।
৩.আর যারা শপথ ভঙ্গ করেননি, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করেছেন তাদের উদাহরণ দিচ্ছি।
ক. আশির দশকের শেষ পর্যায়ে চীনে ছাত্রবিক্ষোভে ‘তিয়ানম্যান স্কয়ারে’ দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকে দমণে নিরাপত্তাবাহিনি সরকারের নির্দেশে গুলি করে এবং এতে প্রায় ১০হাজার বিক্ষোভকারী ছাত্র নিহত হয়। সময়ের বিচারে এই ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করার ফলাফল চীন এখন বিশ্বে বড় অর্থনৈতিক শক্তি।যদি তখন ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করা না-হতো, তবে সাম্রাজ্যবাদীরা সফল হতো এবং চীন জনসংখ্যার ভারে বিপর্যস্ত একটি গরীব দেশ-ই থাকতো। এরকম আরো বহু উদাহরণ বিশ্ব-ইতিহাসে রয়েছে।
উপসংহারে বলতে চাই, শেখ হাসিনা শপথ ভঙ্গ করেননি, সেনাবিহিনি শপথ ভঙ্গ করে বাংলাদেশকে ‘জঙ্গি’দের হাতে তুলে দিয়েছে।তিনি যদি তার শপথে অটল থাকতেন, তবে কোনো লোক রাস্তায় নামতো না, জানের ভয় সবার আছে।৩ আগষ্টই তিনি শপথ ভঙ্গ করেন।৫ আগস্ট দেশকে জঙ্গীদের হাতে তুলে দেওয়া ও শেখ হাসিনাকে বাঁচানোর মঞ্চস্থ-করা নাটকের নায়ক সেনাপ্রধান ওয়াকার। জঙ্গীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেনাবাহিনি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সেকুলার দেশকে ‘জঙ্গি’রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার অপরাধে অপরাধী। এজন্য, বিবেকবান মানুষের মতে, মেটিকুলাস ডিজাইনের নায়ক ইউনুস ও ওয়াকার ইতিহাসের বিচারে একদিন হবে নিন্দিত ব্যক্তি তথা মীরজাফর। আর শেথ হাসিনা হবেন সিরাজ উদ-দৌলার মতো নন্দিত মহান একজন।
আজকে যা কৌতুহলোদ্দীপক, তা ইতিহাসে মন্দ বার্তা বহন করবে একদিন। বিবিসির অবস্থান কী, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ইতিহাসের পাতায়। অপপ্রচার সব সময়ই ইতিহাসে দেরীতে সাক্ষ্য দেয়।