হাঙ্গেরির অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থাগার ‘পাননহালমা আর্চঅ্যাবি’ প্রায় হাজার বছরের পুরোনো। মধ্যযুগীয় এই বেনেডিক্টাইন গ্রন্থাগারটিকে ইউনেসকো হেরিটেজ সাইটের তালিকায় রেখেছে। শত শত বছরের ইতিহাস এখন হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে। কারণ, ছোট্ট একধরনের পোকা। গ্রন্থাগারে রাখা হাজার হাজার বই নষ্ট করে ফেলছে ওই পোকাগুলো। পোকার কবল থেকে কয়েক শ বছরের পুরোনো সব বই রক্ষা করতে এখন তৎপর হয়ে উঠেছে গ্রন্থাগারের কর্তৃপক্ষ। পোকা দমন কার্যক্রমের আওতায় গ্রন্থাগারটির চার লাখ বইয়ের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ বইকে আলাদা করে বিশেষ বাক্সে রাখা হচ্ছে। এরপর এগুলোকে অক্সিজেনশূন্য নাইট্রোজেনভর্তি প্লাস্টিক ব্যাগে ছয় সপ্তাহ ধরে রাখা হবে, যাতে সব পোকা ধ্বংস হয়।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, পোকাটির নাম ‘ড্রাগস্টোর বিটল’ বা ‘ব্রেড বিটল’। সাধারণত শুকনো খাদ্যপণ্যে এটি দেখা যায়। কিন্তু বইয়ের পাতায় ব্যবহৃত জেলাটিন ও স্টার্চভিত্তিক আঠার প্রতিও এদের আকর্ষণ রয়েছে। গ্রন্থাগারের ৪ ভাগের ১ ভাগ বইয়ে এই পোকা পাওয়া গেছে। গ্রন্থাগারটির প্রধান সংরক্ষক জসোফিয়া এডিট হাজদু বলেছেন, এই মাত্রার সংক্রমণ আগে কখনো দেখা যায়নি। পুরো সংগ্রহকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরে একসঙ্গে ট্রিটমেন্ট করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এই সংক্রমণের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। উষ্ণ আবহাওয়া পোকার বিকাশে সহায়ক।
প্যাননহালমা অ্যাবি নির্মাণ করা হয় ৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে। সময়টি হাঙ্গেরি রাজ্য গড়ে ওঠারও চার বছর আগে। এর পর থেকে হাজার বছরের বেশি সময়ে নানা যুদ্ধের মুখে পড়েছে মঠটি। এই সময়ে অটোমান সাম্রাজ্যসহ বিদেশিদের আক্রমণেরও শিকার হয়েছে হাঙ্গেরি। তারপরও হাঙ্গেরি ও মধ্য ইউরোপের সবচেয়ে বিখ্যাত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা হিসেবে টিকে রয়েছে প্যাননহালমা অ্যাবি। হাঙ্গেরির সবচেয়ে প্রাচীন বই ও নথিগুলো সংরক্ষণ করে রাখা আছে প্যাননহালমা অ্যাবির গ্রন্থাগারে। গ্রন্থাগারটিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে হাতে লেখা ১৯টি বই। এ ছাড়া পঞ্চদশ শতাব্দীতে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগের সময়ে শত শত পাণ্ডুলিপি রয়েছে। সেখানে আছে ষোড়শ শতাব্দীর হাজার হাজার বই।গ্রন্থাগারটির পরিচালক ইলোনা আশভানি বলেন, ‘প্রতিবার এই জায়গায় পা রাখলে আমি অবাক হয়ে ভাবি—হাজার বছর আগে এখানে একটি গ্রন্থাগার ছিল। এই জ্ঞানের ভান্ডারের রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের ওপর এক বিশাল দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি একটি বইও পোকায় খেয়ে যায়, তবু সংস্কৃতির একটা অংশ হারিয়ে যায়। যত প্রতিলিপিই থাকুক না কেন, মূলটিই একমাত্র ঐতিহ্য।’
সূত্র : আরব নিউজ