।। কবির য়াহমদ।।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ; নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর কোন কর্মসূচিও ছিল না গোপালগঞ্জে। কর্মসূচি ছিল কেবল এনসিপির, এবং তারা এই কর্মসূচিকে ঘিরে উসকানিমূলক নানা বার্তা ছড়িয়েছে ফেসবুকে।
তাহলে এত প্রাণহানি ঘটল কেন গোপালগঞ্জে? কার দায়?
দায় সরকারের। এক বছরে আগে যদি মানুষের ওপর গুলি চালানোকে অপরাধ ধরা হয়, তবে এটাও অপরাধ। ওটা যদি হয় মানবতাবিরোধী অপরাধ, এটাও তাই।
গত জুলাইয়ে আমরা কাউকে প্রকাশ্যে গুলির নির্দেশ দিতে শুনিনি; এবার শুনেছি। এবার দেখেছি।
কন্ট্রোল রুমে বসা তিন উপদেষ্টার যে ছবি এবং দিকনির্দেশনা এবং এরপর মানুষের ওপর গুলি চালানো, মানুষের মৃত্যু; এগুলোকে কীভাবে অস্বীকার করবেন?
আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেই দেশে–এটা আমরা শুনে আসছি সরকারের দায়িত্বশীলদের মুখ থেকেই। এছাড়া এনসিপির কর্মসূচি প্রতিরোধে আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন কর্মসূচি দিতেও দেখিনি। নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর কোন কর্মসূচি না থাকায় দায় তাদের দেওয়া কি যায়?
তাহলে মাঠে নামল যারা, তারা কারা? তারা স্রেফ বঙ্গবন্ধুপ্রেমী এবং আঞ্চলিকতাবাদে উদ্বুব্ধ একদল লোক। তারা তাদের এলাকা, বিশেষ বঙ্গবন্ধুর মাজার রক্ষায় জীবনবাজি রাখা একদল লোক; সর্বস্তরের সাধারণ জনতা।
গোপালগঞ্জ এমনই এক এলাকা যেখানে মানুষ মুজিবপ্রেম নিয়ে জন্মায়, মুজিবপ্রেম নিয়ে মারা যায়। সেখানে গিয়ে আপনি আঞ্চলিক চেতনার সঙ্গে যা ইচ্ছা তা করতে পারেন না। ফল তো হাতেনাতে।
কথিত বিপ্লবীদের পালিয়ে যেতে হলো সাঁজোয়া যানের পেটে করে। হায় বিপ্লবী, এক বছরেই বিপ্লব নেতিয়ে পড়ল; এবং স্রেফ সেটা স্বেচ্ছাচারিতা আর আমি কী হনুরে ভাবভঙ্গির কারণে।
জুলাইয়ের বেনিফিসিয়ারিরা যা ইচ্ছা তা করতে পারে না। সুস্থ দেশ গঠনে স্বেচ্ছাচারিতাকে ত্যাগ করতে হবে। মানুষের আবেগকে শ্রদ্ধা করতে না পারলে পুরো দেশ গোপালগঞ্জ হতে বেশি সময় লাগবে না।
এগারো মাসে একপাক্ষিক নিপীড়ন সহ্য করে, একটা অঞ্চলের মাত্র কিছু লোক স্রেফ রাস্তায় নেমেছে। তারা ঘোষণা দিয়ে নামেনি, কোন নেতা ছিল না তাদের। সব হয়েছে স্বতস্ফূর্ত। নেতৃত্ববিহীন একটা ক্ষুদ্র প্রতিঘাতে যদি সেনাপ্রহরায় সাঁজোয়া যানের ভেতরে লুকিয়ে পালিয়ে যেতে হয়, তাহলে পূর্বঘোষিত কোন কর্মসূচিতে কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন?
যে যেখানে শক্তিমান, তার শক্তিকে সমীহ করতে হবে। জুলাইয়ের বেনিফিসিয়ারিরা ঢাকায় শক্তিমান। গোপালগঞ্জ ঢাকা আসছে না, তারা কেবল নিজেদের এলাকায় নিজদেরকে রক্ষা করেছে।
সাঁজোয়া যানের পেটের ভেতর ঢোকা বিপ্লবীরা, তোমাদের বিপ্লব-বন্দনা করো ঢাকায় বসে; গোপালগঞ্জবাসী বাধা দিতে আসছে না। গোপালগঞ্জবাসী মুজিব-বন্দনা করছে এলাকায় বসে; তাদের ওখানে হাত ঢুকাতে যাইও না!