।। মৃণ্ময় সেন।।
“তোমার আমার ঠিকানা,পদ্মা মেঘনা যমুনা” কোথা থেকে কিভাবে আসলো এই স্লোগান!? কেন আসলো? কেনইবা এটা বাঙ্গালির আপামর জনমানুষের স্লোগনে পরিনত হয়ে উঠলো? কারো মনে কি এই প্রশ্ন জাগে? কারো মনে জাগে কিনা জানি না, তবে মাঝে মাঝে আমার মনে এই প্রশ্নের উদয় হয়।
প্রতিটা আন্দোলনেই সৃষ্টি হয় নতুন নতুন স্লোগান।এই সৃষ্টি হওয়া নতুন নতুন স্লোগান কখনো মানুষের মনে স্থান করে নেয়,কখনো মানুষকে হাসায় আবার কখনো নির্ভেজাল আত্মকেন্দ্রিক মানুষটিকেও আন্দোলনে আসতে বাধ্য করে। এটাই এই বাংলার রাজনৈতিক ঐতিহ্য।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে আজ অবধি যতগুলো আন্দোলন সফল হয়েছে প্রতিটা আন্দোলনেরই এমন কিছু স্বকীয় স্লোগান রয়েছে। যে স্লোগানটা মুখে,মাথায় বা বইয়ে দেখা মাত্রই এক একটা আন্দোলনের কথা মাথায় আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বর্তমানে ব্যবহৃত “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” স্লোগানটির কথা। এই স্লোগানটির জন্ম বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য। এই স্লোগাণ এর কথা মাথায় আসলেই সবার আগে যে নামটি মাথায় আসবে তিনি হচ্ছেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শহীদ ভগৎ সিং। বলে রাখা ভালো শহীদ ভগৎ সিং এর কল্যাণে স্লোগানটি সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পরলেও এই স্লোগানটির জনক ছিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশে জন্ম নেওয়া ভারত ভাগ বিরোধী উর্দু কবি মাওলানা হাসারাত মোহানি।
আবার “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” স্লোগানটি শুনলেই ভাষা আন্দোলনের কথা মাথায় আসে।
তার মানে বুঝা যাচ্ছে যে একটা আন্দোলনের প্রথম মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে একটি শক্তিশালী স্লোগান। একটি শক্তিশালী স্লোগান হয়তো কোন একজনের চিন্তার ফসল কিন্তু সেই শক্তিশালী স্লোগানটি হয়ে যায় সেই আন্দোলনে সমর্থনকারী অগণিত মানুষের আন্দোলনের ভাষা। একজন ভীতু মানুষ হয়তো মিছিলে যেতে সাহস পায় না তবে তার সমনে দিয়ে যখন মিছিল বা আন্দোলনটি অগ্রসর হয় মনে মনে হলো সেই আন্দোলনের শক্তিশালী স্লোগানটি একবার বলে। এভাবেই একটি স্লোগান হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের, গৃহিনীর, একটা সদ্য কথা বলতে শিখা শিশুর প্রাণের স্লোগান।
একটা স্লোগান একটা আন্দোলনের পরিচায়ক।
সেখান থেকেই এই উপ মহাদেশের এক একটা রাজনৈতিক দল তার গঠনতন্ত্র, তার বিশ্বাস, তার যে আকাংখা, পরিকল্পনা সেটা ফুটিয়ে তুলার জন্য নিজস্ব স্লোগান তৈরি করে। এরই প্রেক্ষাপটে একদল কোন স্লোগান দিলে তাকে মোকাবেলা করার জন্য সেই দলের বিপক্ষ দল স্লোগানটির পাল্টা জবাব হিসেবে একটি স্লোগান তৈরি করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত একদশকে এই বাংলায় খুব প্রচলিত একটা স্লোগাণ আবার জমে উঠেছে। স্লোগানটা কি?
স্লোগাণটা হচ্ছে “জামাত-শিবির,রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়”।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ৩০লক্ষ শহীদ এর রক্ত ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর জন্য দায়ী দল জামাত-শিবির, রাজাকার, আলবদর-আলশামসদের যারা বাংলার মাটিতে রাজনীতি জন্য সকল সুবিধা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে তারাই এখন স্লোগান দিচ্ছে “জামাত-শিবির, রাজাকার,এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়”।
আরও মজার বিষয় হচ্ছে জামাত-শিবির এর বি টিম হিসেবে পরিচিত নতুন কিংস পার্টি (এনসিপি)এই স্লোগানের পাল্টা জবাব হিসেবে স্লোগান দিচ্ছে “কথায় কথায় বাংলা ছাড়,বাংলা কি তোর বাপ-দাদার”।
দিনশেষে কিংস পার্টি একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে এর জন্য যে অন্তত তারা স্বীকার তো করেছে তার রাজাকার,তারা আলবদর, তারা আলশামসের ধারক-বাহক। তাদের স্বীকারকৃত স্লোগানের পথ ধরে বলতে চাই বাংলা অবশ্যই আমাদের বাপ-দাদার কারণ আমাদের বাপ-দাদারাই এই মাটির মুক্তির জন্য তোদের বাপ-দাদাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দিয়ে আমাদের কে এই দেশ দিয়েছেন। আমরা গর্ব করে বলতেই পারি এই দেশ, এই বাংলা, এই মাটি আমাদের বাপ-দাদার। আমরা সিনা টানা করে বলি “বাংলা আমার বাপ দাদার”
কোনদিন তারা কি বলতে পারবি এটা গর্ব করে?
পারবে না। এটাই তোদের পরাজয়, এখানেই আমাদের গর্ব।