দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী নেতা ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ ৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে রপ্তানি খাতে এমন গভীর সংকট কখনো দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি আজ ২০শে জুলাই, রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এতে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকরা অংশ নেন।
এ কে আজাদ বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীরা এই খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন হতাশ ও ক্ষুব্ধ।” তিনি সম্প্রতি একটি বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে বৈঠকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
ব্র্যান্ডটির হেড অফিস তাকে জানায় যে, তারা নিজ দেশের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল এবং ভালো ফলাফল আশা করা যাচ্ছে না। এ কথা শুনে তিনি গভীর হতাশা প্রকাশ করেন।
রপ্তানি খাতে বর্তমান সংকট
এ কে আজাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা রপ্তানি খাতের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ক্রেতা তাকে জানিয়েছে যে, আগামী ১লা আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক আরোপ হলে তিনি তার রপ্তানির ৮০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩৫ শতাংশ খরচ বহন করতে পারবেন কিনা। এর ফলে তার লাভের ১.৩৭ মিলিয়ন ডলার বিপন্ন হতে পারে, যা ব্যবসার স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জে ফেলছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের হুমকি
বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির মোট মান ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার, যার ৮১.৮১ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে রপ্তানির ৯০ শতাংশ নির্ভরতা এই খাতের বড় দুর্বলতা। গত ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে, যা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও শুল্ক নীতির প্রভাব ঝালাপালা করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের ঘোষণা, যা আগামী ১লা আগস্ট থেকে কার্যকর হতে পারে, বাংলাদেশের ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ১৭ শতাংশ নির্ভরতা থাকায়, এই শুল্ক বৃদ্ধি ভোগতা চাহিদা হ্রাস এবং রপ্তানি আয় কমতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, যদি বাজার বহুমুখীকরণ ও শুল্কবিরোধী কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে।
ভবিষ্যতের পথ
এ কে আজাদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি ও শুল্ক ছাড়ের আলোচনা শুরু করা উচিত।
তিনি বলেন, “আমাদের লবিস্ট নিয়োগ করে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে। সরকারকে তৎপর হতে হবে, নতুবা আমাদের রপ্তানি খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”
অর্থনীতিবিদরা মত দিয়েছেন, বিকল্প বাজার যেমন ভারত, রাশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে রপ্তানি প্রসারিত করা জরুরি, যা বর্তমান নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।