।। মহিউদ্দিন মোহাম্মদ।।
মাইলস্টোনের কোনো ছাত্র-শিক্ষককে সেনাবাহিনী কথা বলতে দিচ্ছে না। সাক্ষাৎকার দিতে দিচ্ছে না। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার পরও সেনাবাহিনী মাইলস্টোনের ছাত্র-শিক্ষককে নির্মমভাবে পেটানোর সাহস দেখিয়েছে, মিডিয়ায় লাশের সংখ্যা বলার কারণে (ভুল বা সঠিক)। বর্বরতার সকল সীমা তারা অতিক্রম করেছে।
অনানুষ্ঠানিকভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ (ও ক্লাস ক্যাপ্টেনরা) জানিয়েছে, ৩ জন অভিভাবক নিহত হয়েছেন। ২ জন শিক্ষিকা নিহত হয়েছেন। ১০০ জনের মতো শিশু নিহত হয়েছে। আমি সাংবাদিক না। পেশাদার সাংবাদিকদের আহ্বান জানাই, তারা যেন সত্য তুলে আনেন। অনানুষ্ঠানিক তথ্য ভেরিফাই করেন, এবং নিহতের সত্য সংখ্যা দেশবাসীকে জানান।
এটা পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। মানুষ নিহত হওয়াকে বলা হয় ‘হোমিসাইড’। হোমিসাইড দুই প্রকার।
এক— মার্ডার বা ইচ্ছাকৃত খুন, যেখানে হত্যার উদ্দেশ্যে ভিক্টিমকে আঘাত করা হয়। মেন্স রিয়ায় আল্টেরিয়র মোটিভ থাকে।
দুই— ম্যানস্লটার বা অনিচ্ছাকৃত খুন, যেখানে আঘাতকারী হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে না, কিন্তু ভিক্টিম মারা যায়। চেইন অভ কজেশন ইভেন্ট টু এন্ড আনইনটারাপ্টেড ফ্লো করে।
ম্যানস্লটার অনেকপ্রকার। ইনভলান্টারি ম্যানস্লটার বাদ দিলে কাল্পেবল হোমিসাইড প্রধানত দুই ধরণের ম্যানস্লটার। এক— ভলান্টারি ম্যানস্লটার, দুই— রেকলেস ম্যানস্লটার।
দুটিই শাস্তিযোগ্য অপরাধ, মার্ডারের কাছাকাছি।
বিমানবাহিনী পরিষ্কারভাবে ম্যানস্লটার করেছে, অন্তত রেকলেস ম্যানস্লটার। পৃথিবীর কোনো আইনেই, কোনো দেশেই এই বিমানের পাইলটদেরকে রেকলেস ম্যানস্লটারের শাস্তি থেকে রেহাই দেওয়া যাবে না।
রেকলেস ম্যানস্লটার কখন ঘটে? ধরা যাক আপনি গাড়ি চালানো শিখবেন। আপনি জানেন যে শেখার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালানো কোনো জনবহুল এলাকায় করা যাবে না। তারপরও আপনি পাবলিক সেফটির তোয়াক্কা না করে, অর্থাৎ বেপরোয়া বা রেকলেস হয়ে মতিঝিলে্র রাস্তায় গাড়ি চালালেন, এবং ১ জনকে মেরে ফেললেন। আপনি রেকলেস ম্যানস্লটারের দায়ে কনভিক্টেড হবেন।
ঠিক এ ঘটনাটাই বিমানবাহিনী ঘটিয়েছে। তারা জানে যে ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান চালানো যাবে না। চালালে পাবলিক সেফটির বিঘ্ন ঘটবে, দুর্ঘটনায় মানুষ মৃত্যুর বা হোমিসাইডের ঝুঁকি তৈরি হবে। তারপরও বেপরোয়া বা রেকলেস হয়ে বিমান চালিয়েছে, এবং মর্মান্তিকভাবে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে।
আমি অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ। সে-জায়গা থেকে বলছি, বিমানটি যারা চালিয়েছে, এবং চালানোর অনুমোদন দেওয়ার সাথে যারা যুক্ত, তাদের প্রত্যেকে কমপক্ষে ম্যানস্লটারের অপরাধ কামিট করেছেন। ইফ নট মার্ডার।
কিছুদিন আগে একটি মার্কিন বিমান ঘাঁটি পরিদর্শন করেছিলাম, রকি পর্বতমালায়, লোকালয় থেকে অনেক দূরে। একজন সাবেক মার্কিন সেনাকর্মকর্তার সাথে। সারাবিশ্বে বিমানবাহিনী প্রশিক্ষণ বিমান চালায় সাগরের উপরে, পাহাড়ের উপরে। অর্থাৎ মানুষ নেই এমন এলাকায়। কিন্তু আমেরিকার চেয়েও দক্ষ পাইলটসম্পন্ন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী যুদ্ধবিমান চালায় ঢাকায়, প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে!
আমি এ ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করার আহ্বান জানাচ্ছি, এবং বিমানবাহিনী প্রধানের পদত্যাগ দাবি করছি। টর্ট আইন আমলে নিলে, বিমানবাহিনী প্রধান ‘ডিউটি অভ কেয়ার’ ভায়োলেট করেছেন। সভ্য দেশ হলে ক্রিমিনাল টর্টে তারও বিচার হতো। বাংলাদেশে এটি আশা করছি না, তাই অন্তত পদত্যাগ দাবি করছি। লেখক: কবি ও সমাজ বিশ্লেষক।