।। সেলিম জাহান ।।
ছবিটি আর কথাগুলো আমাকে একেবারে স্তব্ধ করে দিয়েছে। না পারছি সে গুলো মাথা থেকে নামাতে, না পারছি কোন কিছু ভাবতে। সব কিছুই করছি, কিন্তু কেমন যেন অকটা ঘোরের মধ্যে। করোটিতে কেবল একটা কথাই ঘুরে ফিরে বাজছে ‘আমি জানতাম, তুমি আসবে’, ‘আমি জানতাম …’, ‘জানতাম …’, ‘আসবে’। মৃত্যুকে চোখের সামনে রেখে এমন কথা কি করে উচ্চারিত হয়? কোন বিশ্বাসে, কোন জানায়, কোন নির্ভরতায়?
অবয়বপত্রে নানান জনের লেখা থেকে জেনেছি, গতকালের মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের ভয়াবহ দূর্ঘটনার পরে বেঁচে যাওয়া একটি কিশোর তার আহত বন্ধুকে ক্লাসরুম থেকে ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিল। অগ্নিনির্বাপক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বাধা দিয়ে বললেন, ‘এতে কোন লাভ নেই। তোমার বন্ধু বাঁচবে না।’। কিন্তু এ কথার পরেও কিশোরটি তার বন্ধুকে একা একা ফিরিয়ে আনল।
চলে যাওয়া মৃত বন্ধুটিকে দেখে অগ্নিনির্বাপক বিভাগের কর্মকরতাটি বলে, “আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম, এর কোন মূল্য নেই। সে তো আর বেঁচে নেই।’ কিশোর কর্মকর্তাটির দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘না স্যার, এটা সত্যিই মূল্যবান ছিল। যখন আমি তার কাছে গেলাম, সে তখনও জীবিত ছিল। আমার বন্ধু আমাকে দেখে হাসল এবং তার শেষ কথাটা ছিল, ‘আমি জানতাম তুমি আসবে’।
ছবিটি দেখে, কথাগুলো শুনে এবং ঘটনাটি জেনে আমার ক’টি কথা মনে হয়েছে। এক, এমন ভয়াবহ দূর্ঘটনার মধ্যেও অন্য কিছু না চিন্তা করে বেঁচে যাওয়া কিশোরটি তার আহত বন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিল। এ কেমন এক অমোঘ টান! বন্ধুর দেহটি কোলে নিয়ে কিশোরটি চিৎকার করে সবার কাছে সহায়তা চাচ্ছিল। এ কোন আকুতি! মৃত্যুপথ যাত্রী বন্ধুটির শেষ কথা ছিল, ‘আমি জানতাম, তুমি আসবে’। এ কোন বিশ্বাস, এ কোন নির্ভরতা!
চূড়ান্ত বিচারে, বন্ধুত্ব তো শুধু খুশীর সময়ের আনন্দ উৎযাপন নয়, দু:খের সময়ের কষ্ট ভাগাভাগি নয়, বন্ধুত্ব এক অচেনা টান, এক অজানা বিশ্বাস এবং নির্ভরতা। এর কোন আকার নেই, কোন সংজ্ঞা নেই। আমি জানি, আজ সারাদিন একটি কথাই ‘জলের মত ঘুরে ঘুরে’ আমার সঙ্গে কথা কইবে, ‘আমি জানতাম, তুমি আসবে’।
চিত্রকৃতজ্ঞতা: আন্ত:র্যোগ