চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৯ হাজার ১০০টি মামলা দায়ের হয়েছে। গড় হিসেব অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৬০টি এবং প্রতি ২৪ মিনিটে একটি করে মামলা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত নির্যাতনের সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি, কারণ অনেক ঘটনা থানায় অভিযোগ পর্যন্তই পৌঁছায় না। প্রতিদিনই নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, বিশেষ করে মে মাসে, যেখানে ২ হাজার ৮৭টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
এই সময়ে দেশজুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের একাধিক আলোচিত ঘটনা সামনে এসেছে।
১৬ই জুলাই বগুড়ায় এক স্কুলছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে আহত করে দুর্বৃত্ত, নিহত হন তার ভাবী ও দাদি। খাগড়াছড়িতে ২৭শে জুন ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর ১৪ বছরের এক স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়। একইভাবে জুনের শেষদিকে কুমিল্লা ও ভোলায় দুই নারীকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হয়, যার মধ্যে কুমিল্লার ঘটনায় নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ধর্ষণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা, গৃহকর্মী নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন, বাল্যবিবাহ এবং হত্যার মতো অপরাধ নারী ও শিশু নির্যাতনের আওতায় পড়ে।
পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর জানান, প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং থানাগুলোর দায়িত্বশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি নারী ও শিশুসহায়তা ডেস্কগুলোকে আরও সক্রিয় করা হচ্ছে।
তবে নারী অধিকারকর্মীরা মনে করেন, পুলিশের এই পরিসংখ্যান প্রকৃত ঘটনার পুরো চিত্র তুলে ধরে না।
‘আমরাই পারি’ জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, “অনেক নারী ও শিশু সামাজিক চাপ, ভয় কিংবা প্রভাবশালীদের কারণে থানায় যেতে পারেন না। ফলে প্রকৃত নির্যাতনের চিত্র আরও ভয়াবহ। বর্তমান সরকারের সময়ে নিন্যাতনের মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান মনে করেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে শুধু আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধীদের দ্রুত বিচার ও ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা কমানো সম্ভব হবে না। বর্তমান সরকারের নারী বিরোধী কারযক্রম থেকেও সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।