প্রায় সাড়ে ৮ লাখ বছর আগে শিশুদের হত্যা করে ভক্ষণ করা হতো। স্প্যানিশ প্রত্নতাত্ত্বিকরা এর প্রমাণ পেয়েছেন। স্পেনের উত্তরে আতাপুয়েরকা অঞ্চলের গ্রান দোলিনা গুহায় পাওয়া শিশুর একটি গলার হাড়ে কাটা দাগের বিশ্লেষণ করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মৃত শিশুটির বয়স ছিল আনুমানিক ২ থেকে ৪ বছরের মধ্যে। গ্রান দোলিনা খননের সহপরিচালক প্রত্নতত্ত্ববিদ পালমিরা সালাদি বলেন, ‘শিশুর বয়স এবং হাড়ে কাটা দাগের নিখুঁত প্রমাণ একে বিশেষ করে তোলে। বোঝা যাচ্ছে যে, শিশুটিকে অন্য শিকারের মতোই প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছিল।
কাতালান ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান প্যালিওইকোলজি অ্যান্ড সোশ্যাল ইভোলিউশন (IPHES) এর গবেষক দলটি জানিয়েছে যে, ঘাড়ের হাড়ে কাটা চিহ্নের অবস্থান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে শিশুটির শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল। এই মাসে গবেষক দল সেখানে খনন করে ১০টি কঙ্কালের একটি সেট পান, যেগুলোর অনেকগুলোতেই মাংস ছাড়ানোর দাগ ও হাড় ভাঙার চিহ্ন দেখা গেছে—যেমনটা সাধারণত শিকার করা প্রাণীর হাড়ে দেখা যায়। উদ্ধারকৃত সব কঙ্কালই ছিল ‘হোমো আন্টেসেসর’ নামের এক প্রাচীন মানব প্রজাতির। এই প্রজাতি আনুমানিক ৭ লাখ ৭০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাদের মস্তিষ্কের আকার ছিল প্রায় ১,০০০ থেকে ১,১৫০ ঘন সেন্টিমিটারের মধ্যে, যা আজকের মানুষের গড় ১,৩৫০ ঘন সেন্টিমিটার মস্তিষ্কের আকারের চেয়ে ছোট। গবেষকরা বলেছেন, ‘হোমো আন্টেসেসর’ কেবল স্পেনের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আতাপুয়েরকাতেই পাওয়া গেছে, ফলে এটি মানব বিবর্তনের বৃক্ষে কোথায় অবস্থান করে তা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে।
১৯৯৭ সালে আবিষ্কারের পর থেকেই বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতিকে নিয়েই বিতর্কে রয়েছেন—কেউ কেউ বলেন এটি মানব ও নিয়ান্ডারথালের পূর্বপুরুষ, কেউ বলেন এটি মানবগোষ্ঠীর একটি আলাদা শাখা। যদিও আদিম মানুষের মধ্যে নরমাংসভক্ষণের প্রমাণ সুপ্রতিষ্ঠিত, তবুও শিশুকে খাওয়ার প্রমাণ পাওয়া অস্বাভাবিক। যদি এই অনুমান সত্য হয় তাহলে এটি আজ পর্যন্ত পাওয়া এই প্রথার প্রাচীনতম প্রমাণ হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, নতুন আবিষ্কারটি এই অনুমানকে আরও দৃঢ় করে যে এই আদিম মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করতো।