বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ান ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি (এসিটি)। দলটির ৫২তম বার্ষিক সম্মেলনে গৃহীত একটি প্রস্তাবে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, যা পর্যালোচনার জন্য লেবার পার্টির আন্তর্জাতিক নীতি কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর রাজনৈতিক বিরোধিতা ও প্রধান রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে এবং বিচার বিভাগ ও সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে যা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও আইনের শাসনের ওপর গভীর আঘাত হেনেছে।
প্রস্তাবটিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। উপাসনালয়, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছে। প্রতিনিধিরা এই পরিস্থিতিকে “রাষ্ট্রপ্রণোদিত সাংস্কৃতিক নির্মূল অভিযান” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এসিটি লেবার মনে করে, বাংলাদেশের এ ধরনের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও পরিবেশ-সম্পর্কিত সহযোগিতার ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অস্ট্রেলিয়া যে অঞ্চলে ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন (IORA) ও কোয়াডের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করে আসছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি সেই ভূরাজনৈতিক কাঠামোর জন্যও হুমকিস্বরূপ।
প্রস্তাবের আলোচনায় প্রতিনিধিরা বলেন, “বাংলাদেশ কেবল একটি অংশীদার রাষ্ট্র নয়, বরং আমাদের অঞ্চলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও স্থিতিশীলতার একটি সূচক। দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আমাদের যৌথ আঞ্চলিক ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
প্রতিনিধিরা আরও স্মরণ করিয়ে দেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও সমুদ্র নিরাপত্তা খাতে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বহুদিনের সহযোগিতা রয়েছে। এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর নির্ভরশীল।
প্রস্তাবে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। যাতে বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বাধীন ও আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষিত নির্বাচন নিশ্চিত হয়; বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়; বাংলাদেশ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, এবং ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করে।
যদিও প্রস্তাবটি সরাসরি জাতীয় নীতিনির্ধারণ করে না, তবে আন্তর্জাতিক নীতি কমিটির বিবেচনার জন্য এটি জমা দেওয়া হয়েছে—যা লেবার পার্টির পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও জোরালো অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। এটি অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে।