বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনা-বিধুর ও হৃদয়বিদারক দিন ১৫ আগস্ট—যেদিন ১৯৭৫ সালে আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমাদের পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
এটা কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড ছিল নয়—এটি ছিল একটি স্বাধীন জাতিকে আবারও পরাধীনতার দিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। সেদিন কেবল একজন রাষ্ট্রপতিকে নয়, একজন পিতা, একটি জাতির মুক্তির প্রতীক, বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল। ঘাতকেরা ভেবেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই বাংলাদেশ আবার দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি হয়ে পড়বে।
আমার পরিবার—আমার মা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, আমার তিন ভাই—শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ভাবীদ্বয় ও অন্যান্য স্বজনদের হারিয়েছি । এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সমগ্র মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সমগ্র জাতির বিবেককে চরমভাবে আহত করে। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও স্বপ্নের কাণ্ডারিকে হারিয়ে বাঙালি জাতি শোকাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
সেদিন বিদেশে থাকায় বেঁচে যাই আমি এবং আমার ছোট বোন শেখ রেহানা। আজও আমরা সেই ক্ষত বহন করে চলেছি। আমরা হারিয়েছি আমাদের পরিবার, আমাদের শৈশব, আমাদের নিরাপত্তা—কিন্তু হারিয়ে যেতে দেই নি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি।
আমি, শেখ হাসিনা—জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা, বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আপনাদের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়, নিরলসভাবে চেষ্টা করেছি জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেছিল এবং আমাকে ও রেহানাকে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছিল। পরম করুণাময়ের বিশেষ কৃপায় আমরা প্রাণে বেঁচে যাই। সবকিছুর পরেও আমার ধ্যানে-জ্ঞানে বাংলাদেশ ও দেশের জনগণ। দেশের জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানোই আমার রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য।
আজ এই দুঃসহ অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে আমি বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যারা ১৯৮১ সাল থেকে ১ আগস্ট রক্তদান কর্মসূচি পালন করে আসছে। জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জনকল্যাণমুখী কাজ করে আসছে। কৃষক লীগ সব সময় কৃষকের পাশে থেকেছে, দেশের মানুষের পাশে থেকেছে—এটাই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, এটাই আওয়ামী লীগের চেতনা।
প্রিয় সহযোদ্ধারা,
আমার আবেদন—শোককে শক্তিতে পরিণত করুন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অন্তরে ধারণ করে আগামী দিনের সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকুন। আমি জানি, ইতিহাস কখনও অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ায় না। সত্যের জয় হবেই।
বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ একদিন আমাদের ডাকেই সাড়া দেবে, গণতন্ত্র ফিরে আসবে, জনগণের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার আবার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আজকের এই রক্তদান কর্মসূচি শুধু একটি মানবিক কাজ নয়—এটি প্রতিরোধ, প্রতিজ্ঞা এবং পুনর্জাগরণের প্রতীক। আমি সশ্রদ্ধ চিত্তে শ্রদ্ধা জানাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ই আগস্টের সকল শহীদদের প্রতি। তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী, সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি আমার আহ্বান— এই আত্মত্যাগকে বৃথা যেতে দেবেন না। আপনাদের ঐক্য, সাহস ও সংকল্পই আমাদের মুক্তির পথ রচনা করবে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক তারিখ: ৩১ জুলাই ২০২৫