আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একতরফা সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
গত বছরের ১৪ থেকে ১৭ই জুলাই পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬৪ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাময়িক বহিষ্কার এবং ৭৩ জন সাবেক শিক্ষার্থীর একাডেমিক সনদ চূড়ান্তভাবে বাতিল করেছে। এছাড়া, আরও ৬ জনের সনদ দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
তবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।
জেএমবিএফ-এর মতে, জাবি তার একাডেমিক মূল্যবোধ ও ন্যূনতম ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। শুধুমাত্র প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এত বড় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা (UDHR) এবং আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চুক্তি (ICCPR)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিশেষ করে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিচারিক প্রক্রিয়ায় আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার এবং সার্বজনীন শিক্ষার অধিকার পদদলিত করেছে সম্পূর্ণভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং ক্যাম্পাসে জেএমবিএফ-এর নিজস্ব সূত্রের বরাতে জানা গেছে, জাবির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা সিন্ডিকেট গত ৪ঠা আগস্ট, সোমবার গভীর রাতে এক গোপন বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত নিজস্ব একপেশে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে।
এ বিষয়ে ফরাসি মানবাধিকার কর্মী ও জেএমবিএফ-এর প্রধান উপদেষ্টা মি. রবার্ট সিমন বলেন, “এটি সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কেবল ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে এমন অন্যায্য ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া বেআইনি ও অমানবিক।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অশুভ বার্তা বহন করে। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এহেন আচরণে গভীরভাবে মর্মাহত।”
জেএমবিএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও খ্যাতনামা মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহিনুর ইসলাম বলেন, “শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার এবং একজন মানুষের ভবিষ্যতের ভিত্তি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক আদর্শের কারণে আজীবনের জন্য বহিষ্কার বা সনদ বাতিল করা নির্মমতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি সরাসরি সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।”
এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি।