।। আজম খান।।
জুলাই ঘোষনাপত্র মূলত বিএনপি এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ক্রাইসিসে ভোগা বদরুদ্দীন ওমর এবং চিংকু বামদের ভাষ্য। ওখানে বাদবাকি আরো ওয়ার্ডিং আছে যেমন জুলাই সন্ত্রাসকে ইমিউনিটি দেয়া, লীগকে ফ্যা সি স্ট ডাকা, আওয়ামি লীগ আমলে হওয়া অর্থনৈতিক উন্নতিকে পাবলিকলি একনলেজ না করা, ইত্যাদি ইত্যাদি। ওগুলো জামাত, বিএনপি, বাম সবার কমন বিধায় উল্লেখ করলাম না।
১।
বিএনপি ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের আগে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে কারা লড়েছে, কারা ছয়দফার নেতৃত্ব দিয়েছে, ৬৯ এর অগ্নিঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭ই মার্চের ভাষন ইতিহাস থেকে আড়াল করে রাখতে চায় কারন তাতে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক সেটা বাতিল হয়ে যায়। এছাড়াও জিয়া যে তার ভাষনে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন সেটাও তারা এড়িয়ে যায়। যাই হোক, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিএনপি যেভাবে নির্মান করতে চায় তার বয়ানকে সত্য থেকে সুরক্ষা দিতে ততটুকু বয়ানই জুলাই ঘোষনাপত্রে আছে।
২।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামল নিয়ে সবচাইতে বেশি সমস্যা হচ্ছে সাবেক জাসদ এবং বামাতি ঘরানায়। এরা সব মিলে দেশে বিপ্লবের নামে একটা অরাজকতা লাগায়ে রাখছিল। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, ১৮ ডলার হচ্ছে ফরেন রিজার্ভ, ব্রিজ কালভার্ট – রাস্তাঘাট ধ্বংস, মানুষের বাড়িঘর নাই, ফসলের বীজ- হালের গরু নাই, স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে যুদ্ধে, সে সময়ে এরা বিপ্লব করতে নেমেছিল স্বশস্ত্র কায়দায়। এদের ন্যারেটিভে সব সময়ে ১৯৭২-৭৫ সালে দেশে অভাব-অনটনের গল্প পাবেন কিন্তু কেন দূর্ভিক্ষ হয়েছিল ঐ আলোচনায় সরকারের প্রতি দোষারোপ করা ছাড়া আর কোন ফ্যাক্টরের আলোচনাই পাবেন না। বাকশাল নিয়ে সমালোচনা পাবেন কিন্তু বাকশাল যে একটা সর্বদলীয় শাসনব্যবস্থা সেটা পাবেন না। বঙ্গবন্ধুর আমলে তারা কথা বলতে পারতো না কিন্তু সরকারের যাবতীয় সমালোচনার সূত্র তখনকার পত্রিকা। বাসন্তী নামক এক মেয়েকে টাকা দিয়ে শরীরে জাল পরিয়ে ছবিও পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। যা পরে ফাঁস হয়। এরা ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত আওয়ামি লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে যে বয়ান তৈরি করেছিল সেসব পুনপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা এই ঘোষণাপত্রে করা হয়েছে।
৩।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড সেনাবাহিনীর হাতে। সেই সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে বিএনপির জন্ম এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বেনেফিশিয়ারি জিয়া। তাই এটা বিএনপির জন্য বিব্রতকর বিধায় ঘোষণাপত্রে নাই।
৪।
বিএনপি-জামাত ২০০৬ সালে ভূয়া ভোটার তালিকা ছাপিয়ে এবং নিজের মনমত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নির্বাচন করার প্রচেষ্টা করেও আওয়ামি লীগের লগি-বৈঠার কারনে হার মানতে বাধ্য হয়। সেনাবাহিনী ব্যাকড সরকার আসে। তারপরে নির্বাচনে তারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ঐ পরাজয় ছিল তাদের নৈতিক পরাজয়ও। সেই ইতিহাসকে নতুন করে নির্মান করতে ১/১১কে গণতন্ত্র তথা তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসাবে দাবী করেছে।
(এই ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক বার্তা আছে। বিএনপির বয়ান এই ঘোষনাপত্রে বেশি করে যুক্ত করার কারন ইউনুস এবং এনসিপি হয়তো হাল ছেড়ে দিয়ে ধরে নিয়েছে বিএনপির সম্মতি ছাড়া কোন প্রকারের ইমিউনিটি পাওয়া যাবে না। কারন বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। যদি সামনে এনসিপি বিএনপির সাথে জোট করতে চায় অবাক হইয়েন না। এছাড়া বিএনপির মির্জা ফখরুলরা যদি এতে সম্মতি না দিতো তবে এর ফুটা পয়সা দামও থাকতো না। এখনো যে খুব একটা আছে সেটা বলা যাবে না। বছর বা কয়েক বছরের মাঝে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।)