একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিপরীতে রাষ্ট্রীয় সত্যের ভাষ্য
২০২৫ সালের তথাকথিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’কে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার অপচেষ্টা একটি সরাসরি সাংবিধানিক ধৃষ্টতা এবং জাতির ইতিহাস বিকৃত করার সুস্পষ্ট প্রয়াস। এই ঘোষণাপত্রকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চক্রান্ত সংবিধান, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস,সব কিছুর সাথেই সরাসরি বিরোধপূর্ণ।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলে দেয়, শুধুমাত্র ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালকেই “অন্তর্বর্তীকালীন এবং অস্থায়ী বিধান” হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ আছে। এর বাইরে কোনো অতিরিক্ত ঘটনা বা দলীয় ইচ্ছাকৃত ঘোষণা, এমনকি তা যতই নাটকীয় বা জাঁকজমকপূর্ণ হোক না কেন, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এটাই আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোর মূল ভিত্তি।
সর্বোচ্চ আদালত ইতোমধ্যে সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ৫ম ও ৭ম সংশোধনীর রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সংবিধান লঙ্ঘন, সামরিক ক্ষমতা দখল এবং অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কায়েম সবই ‘রাষ্ট্রদ্রোহ, নাশকতা ও বিশ্বাসঘাতকতা’র শামিল। এই প্রেক্ষাপটে সংবিধানে ৭ক অনুচ্ছেদ যুক্ত করে বলা হয় সংবিধানবিরোধী যেকোনো ক্ষমতা দখল, প্রয়াস, ষড়যন্ত্র বা সহায়তাকারী যেকোনো ব্যক্তিই হোক না কেন শাস্তিযোগ্য অপরাধে দণ্ডিত হবেন।
তদুপরি, ৭খ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো, যেমন প্রস্তাবনা, প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ, নবম-ক ভাগ, তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার অংশ, এবং ১৫০ নম্বর অনুচ্ছেদসহ যেসব ধারা সংবিধানের ভিত্তি তেগুলোর কোনো পরিবর্তন, সংযোজন বা পরিবর্তনযোগ্য নয়। অর্থাৎ, ১৯৭১ সালের বাইরের কোনো ঘোষণাপত্রকে সংবিধানে ঢোকানোর চিন্তা করাটাই সংবিধান লঙ্ঘনের সমতুল্য।
অতএব, ২০২৫ সালের তথাকথিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির কথা ভাবাটাই একটি রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র। এটি কোনো রাজনৈতিক সংগ্রামের ফসল নয়, বরং একটি পেশাগত ষড়যন্ত্র, বিদ্রোহ এবং জঙ্গিবাদী কর্মসূচির দলিল যা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটানো হয়েছিল।
এখানে স্মরণযোগ্য যে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যে ঘটনা ঘটে, তার মধ্যে ছিল,,
৩,২৪০ পুলিশ সদস্যকে হত্যা,
নির্বিচারে বেসামরিক নিরীহ মানুষের ওপর হামলা,
লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ,
রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস,
এবং বিদ্রোহমূলক নাশকতা।
এইসব অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত যখন সামনে আসবে, তখন জাতি বুঝবে এটি কেবল রাজনৈতিক বিভ্রান্তি নয়, বরং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ।
এই তথাকথিত ঘোষণাপত্র আজ যারা উল্লাসের সাথে প্রচার করছেন, কাল তাদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, রাষ্ট্র কখনো বিশ্বাসঘাতকদের ভুলে না। আর ইতিহাস কখনো ‘ঘোষণাপত্রে’ লেখে না, ইতিহাস লেখে রক্ত, আত্মত্যাগ ও বৈধতা দিয়ে।
তাই সময় এসেছে জনগণকে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করা, সংবিধানের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা এবং এই বিপজ্জনক অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে সকলে মিলে সোচ্চার হওয়া।
বাংলাদেশের জনগণ একবার ১৯৭১ সালে প্রমাণ করেছে, দেশদ্রোহী ও অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে তারা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করতে পারে। এবারও তা করবে। কারণ এই রাষ্ট্র কোনো ঘোষণাপত্রে নয়, এই রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে শহীদের রক্তে আর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে।(আওয়ামীলীগ পেইজ থেকে)