।।মহাবুব জামান ।। ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
তুমিও জানো,আমিও জানি জামাত-শিবির পাকিস্তানি…… সাবাস,ছাত্র ইউনিয়ন !!!
এই সাহসী ছাত্র ইউনিয়নই আমরা করেছি………..
গত পরশু ছাত্র ইউনিয়ন ও আরো চারটি ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত করেছিল এই শ্লোগানে…….
এর ফলে জুলাই প্রদর্শনী থেকে তুলে ফেলতে হয় যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি হওয়া আল-বদর রাজাকারদের ছবি।
এরই নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,এরই নাম ছাত্র ইউনিয়ন !
সকল আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর দেশ মাতৃকার সকল আন্দোলনের অগ্রনী ছাত্র ইউনিয়ন।
আমি সবসময়ই বলি ” আমার জীবনের পাঠশালা ছাত্র ইউনিয়ন “।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় গড়ে ওঠা এই সংগঠন।বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন,উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ-সর্বত্রই ছাত্র ইউনিয়ন ছিল সামনের কাতারে। যেখানেই দেশপ্রেম আর সংগ্রাম সেখানেই ছাত্র ইউনিয়ন !
স্বাধীনতার পর তাই শ্লোগান তুললো – ” লাখো শহীদের আত্মদানে মুক্ত স্বদেশ, এসো দেশ গড়ি”।
ছুটে গেলো কল-কারখানায়, গ্রামে-গঞ্জে,স্কুল-কলেজে। চালু করতে হবে শিল্প-কারখানা, সাহায্য করতে হবে কৃষি কাজে, আরম্ভ করতে হবে শিক্ষাক্রম। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নামে গড়ে উঠলো ছাত্র ব্রিগেড-কেন্দ্রে,জেলায়,থানায়,গ্রামে-গঞ্জে।
সে কি দেশ গড়ার উন্মাদনা !
পথিকৃৎ ছাত্র ইউনিয়ন……..
১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী ক্লাশ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।শুরু হয় নতুন জীবন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে ছাত্র ইউনিয়ন।
চারিদিকে ছাত্র ইউনিয়নের জয় জয়কার!
স্বাধীনতার পর ছাত্র ইউনিয়ন-এর পর পর দুইটি জাতীয় সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশ গড়ার আন্দোলনে তিনি আমাদের অনুপ্রানিত করেছেন।আমরা বুঝেছি বঙ্গবন্ধু কোন দলের নয়, বঙ্গবন্ধু সবার, সমগ্র জাতির।
১৯৭৩ সালের পহেলা জানুয়ারি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মতিউল-কাদের।সারা দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন গড়ে ওঠে।স্বাধীন দেশে প্রথম গুলি বর্ষনের প্রতিবাদে পল্টন ময়দানের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ‘ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ’ বাতিল করা হয়।
আবার এই ছাত্র ইউনিয়নই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ছাত্রলীগ ও ডাকসুকে নিয়ে প্রথম প্রতিবাদ মিছিল করেছে দমধুর ক্যান্টিন ও কলা ভবনে। এরাই বিশাল মৌণ মিছিল নিয়ে বত্রিশ নম্বরে গিয়েছিল ৪ নভেম্বরে।
এদের নেতৃত্বেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সভায় বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণে সর্বসম্মত শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৭৫-এর ৪ নভেম্বর।বঙ্গবন্ধুর স্মরণে এটাই একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শোক প্রস্তাব।
ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস মানেই ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস।গত পরশু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তারই প্রমাণ।
৭৩ বছরের ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস বহু উত্থান-পতন, ঝড়-ঝঞ্চার ইতিহাস, গৌরবের ইতিহাস।
এরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আমাদের জীবনের সর্বত্র।যার যার নিজের অবস্থানে থেকেই দেশকে রক্ষা করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধকে রক্ষা করতে হবে।
আজকে এক অন্ধকার সময় আমরা অতিক্রম করছি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ আজ আক্রান্ত।ওরা আমাদের ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলতে চায়।ওরা মুছে ফেলতে চায় আমাদের ইতিহাস ,ঐতিহ্য,সাহিত্য-সংস্কৃতি,জীবন ধারা।
জুলাই আন্দোলন শুধু রেজিম চেঞ্জের জন্য হয় নি।এই সুযোগে অনেকেই চাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সব চিহ্ন মুছে ফেলতে, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করতে, সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে।এমনকি দেশের নাম,মানচিত্রও বদলে ফেলতে চায়। ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাস্থান, রিপাবলিক অব গ্রেটার বেঙ্গল- কত কিছুই না চিন্তা হচ্ছে। দেশটাকে ওরা ধ্বংস করে দিল।
ভূ-রাজনীতির গভীর ষড়যন্ত্রের আমরা অংশী হয়ে গেছি।
এই সর্বনাশা খেলা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। সবার ভূমিকা এক রকম হবে না। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সবাইকে দৃঢ় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে- এটাই ছাত্র ইউনিয়নের শিক্ষা।
আমরা একত্র হতে পারি না পারি,এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবো।
অভিনন্দন বর্তমান ছাত্র ইউনিয়ন!
তোমরা এগিয়ে যাও অন্যান্য সাথী সংগঠনকে নিয়ে। যত ঝড়- ঝামেলাই আসুক, এটাই ছাত্র ইউনিয়ন।
মুক্তিযুদ্ধকে আমরা রক্ষা করবোই। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত !!!