‘কাব্য ছন্দে সৈকতে’ এক ঝাঁক কবি, আবৃত্তিকার ও সংস্কৃতিকর্মী
।। বিশেষ রিপোর্ট।।
‘আবৃত্তি সঙগঠন ‘ছান্দসিক‘এর কর্ণধার বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীন ও তাঁর সহযাত্রী সংস্কৃতিকর্মী আরিফুর রহমান খন্দকার থাকেন সাউথ এন্ড সীর’সমুদ্র পারের একটি পল্লীতে।সমুদ্রের বিশালতা তাদের হৃদয়মনকে আন্দোলিত করে ধ্বনি তুলে প্রেম ও দ্রোহের। ডাক পাড়েন লন্ডনের কবি, আবৃত্তিকার ও সংস্কৃতিকর্মীদের এক ব্যতিক্রমী আয়োজনে। ‘প্রেম ও দ্রোহের কবিতাপাঠ’-কাব্যছন্দে সৈকতে’। যেমন আয়োজন তেমন সাড়া। প্রায় অর্ধ শতাধিক কবি, আবৃত্তিকার আর সংস্কৃতিকর্মী ছুটে যান প্রথমে মুনিরা পারভীনের সবুজেঘেরা বাড়িতে।হই-হুল্লাড়,খাওয়া=দাওয়া ছবিবাজি কত কী,তারপর মূল অনুষ্ঠান সমুদ্রসৈকতে কবিতা।পাতা হয় নকশি কাঁথা পাথর কণিকার ওপর। যে যার মতো বসেপড়া। ‘সমুদ্র তুমি মানুষ দেখেছো, হদপিণ্ড দেখোনি।’ এমনি শুরু. . .।
সামনে উদাত্ত ভঙিমায় সমুদ্র, আকাশ নি;সীম। সমুদ্র-পাখির ওড়াওড়ি। অসংখ্য বোট জোয়ার-ভাটায় থমকে পড়ে আছে চরে। বিষাদ আর নি:সীম হাতছানি কবিদের আনমনা শুধু করেনি, প্রেমে উদ্বেল, উত্তেজনায় দ্রোহময় হুলস্থুল এক আনন্দঘন মুহুর্ত গড়িয়ে পড়ে সমুদ্রতটে। অমর এই দিনটি ১০ আগস্ট ২০২৫।
প্রথমেই মুনিরার কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ে প্রেমের কবি জীবনানন্দের কবিতা ‘‘হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,/সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে’’/
জীবনানন্দ দাশের মতো কবিতার অন্তহীন পথে আমরাও হাঁটতে চাই। সম্মিলিতভাবে সৈকতে অবগাহন করতে চাই কবিতার শব্দসুধা। কথার ঢেউয়ে জাগরিত করতে চাই সময়কে। প্রেম, ভালোবাসা, দহন-দ্রোহ, সম্প্রীতি, মানবতা ও দেশাত্ববোধে- আমাদের কাব্যযাত্রায় পাশে পেয়েছি, কবিদের, বাচিক ভূবনের বাসিন্দাদের।বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালো অধ্যায় থেকে মুক্তির আকাঙ্খা ব্যক্ত করে মুনিরা পারভীন অনুষ্ঠান শুরু করেন।তিনি সুউচ্চ কণ্ঠে উচ্চারণ করেন-‘জাগো মানুষ’।
প্রথমেই কবি হামিদ মোহাম্মদ-এর কবিতাপাঠ। কিন্তু এ সময় যুক্ত হয় আরেকটি ব্যতিক্রমী ও চমক দেয়া মুহূর্তের। কবি হামিদ মোহম্মদ-এর সম্প্রতি প্রকাশিত ‘প্রেমর কবিতা’র মোড়ক উন্মোচন।

হাতে হাতে সকলেই একটি ‘প্রেমর কবিতা’ বই নিয়ে করতালির মাধ্যমে সমুদ্রতীরে বাতাসকে কাঁপিয়ে তুলেন। এ রকম মুহূর্ত যে আসবে কেউ আগে জানেননি।এজন্য বেশি আনন্দ উপভোগ করেন সকলে।
কবি হামিদ মোহাম্মদ তাঁর বই থেকে প্রেমের একটি কবিতা ‘আহজারি’পড়ে শোনান, আবেগ ও উত্তজনায়। শ্রোতাদের মুগ্ধ করতালি কী থামে? বাংলদেশের বর্তমান কালো অধ্যায় থেকে মুক্তির আহবান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান।এ সময় উপস্থিত কবি ও আবৃত্তিকর্মীদের প্রত্যয়দীপ্ত হয়ে ওঠতে দেখা যায়।
একে একে আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী ইয়াসমীন সুলতানা পলিন মাঝি, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব উর্মি মাজহার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নীলুফা ইয়াসমীন হাসান, সিলভিয়া, লুতফুন নাহার বেবি,আপেল মাহমুদ, রুমী বেগম,জযন্তী দেব টুম্পা,নার্গিস কামাল, শেলিনা শেলী । আরো প্রেম ও দ্রোহের বক্তব্যসহ কবিতা পাঠ করেন সংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ এনামুল ইসলাম। তিনি আশির দশকের ঢাকাকেন্দ্রিক কবিতা চর্চার প্রেমময় বর্ণনা দিয়ে বলেন, কবি আবুল হাসান, কবি সুরাইয়া খানমসহ রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন সময়কে ধারণ করা প্রেমের কবি।তিনি দু:খ করে বলেন এই প্রেমিক কবিদের আমরা তাদের অল্প বয়সে হারিয়ে ফেলেছি। সৈয়দ আনাস পাশা বলেন, প্রেমকে কোনোদিন পাত্তা দিইনি। আজকে মনে হচ্ছে প্রেম আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান কবি গোলাম কবির, কবি মুহম্মদ ইকবাল,কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল,কবি মিল্টন রহমান,কবি নজরুল ইসলাম অকিব,কবি উদয় শঙ্কর দুর্জয়, কবি জুয়েল রাজ, কবি ইমদাদুল খান,কবি আসমা মতিন ও কবি শাহ আলম। কবিতা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মনকাড়া বক্তব্য রাখেন শামীম আরা হেনা, সৈয়দা ফেরদৌসী কলি, নাজমা রশিদ ও রেবা আখতার চৌধুরী প্রমুখ।
সব শেষে একটি রঙিন ও দীপ্তিময় কেক কাটা হয়।মিষ্টি কেক খেয়ে খেয়ে সকলে বাড়ি ফিরতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে কবি হামিদ মোহাম্মদ-এর ‘প্রেমের কবিতা’ বইটি হাতে নিয়ে আরেক দফা ছবিবাজি হয়।

সমগ্র অনুষ্ঠানটি ক্যামেরা বন্দী করেন স্থিরচিত্রে ও ভিডিও চিত্রে জয়দীপ ও আপেল মাহমুদ।তারা মিশে গিয়েছিলেন অনুষ্ঠানের প্রতিটি মুহুর্তের সাথে। প্রতি বছর এমনি সমুদ্রতীরে কবিতার আসর হবে ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুনিরা পারভীন অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন।