ছবিতে হাসিখুশি যে কিশোরীদের দেখছেন, তাদের করুণ পরিণতি হয়তো আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
সময়টা জুলাই ১৯৪৫। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে ক্যাম্পিং করতে গিয়েছিল ১৩ বছর বয়সী একদল বান্ধবী। ছবির সামনে থাকা মেয়েটির নাম বারবারা কেন্ট।
তারা জানত না যে, মাত্র ৪০ মাইল দূরেই ম্যানহাটন প্রজেক্টের বিজ্ঞানীরা ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বারবারা পরে স্মৃতিচারণ করে বলেন, “হঠাৎ আকাশে তীব্র আলো আর বিশাল এক মেঘের কুণ্ডলী দেখলাম… কিছুক্ষণ পরেই আকাশ থেকে সাদা কণা ঝরতে শুরু করলো।”
তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে সেগুলোকে তুষার ভেবে খেলা শুরু করে, মুখেও মাখে। কিন্তু কণাগুলো ঠান্ডা ছিল না, ছিল গরম। তারা ভেবেছিল, গ্রীষ্মকাল বলেই হয়তো এমন।
আসলে সেগুলো কোনো তুষার ছিল না। সেগুলো ছিল ‘ট্রিনিটি টেস্ট’-এর পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে ছড়িয়ে পড়া ভয়ংকর তেজস্ক্রিয় ছাই । বিস্ফোরণের আগে বা পরে আশেপাশের হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে কোনো সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি বা নিরাপদ স্থানে সরানোও হয়নি।
এর পরিণতি ছিল ভয়াবহ। বারবারা কেন্ট এবং তার সব বান্ধবী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ছবিতে থাকা প্রত্যেকটি মেয়ে ৩০ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা যায়। শুধুমাত্র বারবারা নিজে ক্যান্সারের সাথে বহু বছর যুদ্ধ করে বেঁচে ছিলেন।
পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা শুধু জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পরীক্ষার কারণে নিজেদের দেশেই যারা ভয়াবহ মূল্য দিয়েছিলেন, তাদের কথা প্রায়ই আড়ালে থেকে যায়। অস্ট্রেলিয়ার মারালিঙ্গাতেও পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে বহু আদিবাসী মানুষ ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন, যে ইতিহাস অনেকেরই অজানা।
বিজ্ঞানের অগ্রগতির পেছনে লুকিয়ে থাকা এমন অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের কথা আমাদের মনে রাখা উচিত।