।। জয়বাংলা প্রতিবেদন।।
‘বঙ্গবন্ধুতেই শক্তি, বঙ্গবন্ধুতেই মুক্তি’ এ মন্ত্রে অনুষ্ঠিত বিষয়ভিত্তিক আলোচনাসভার আয়োজনে প্রধান আলোচক ছিলেন ব্যরিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর আলোচনায় বলেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উতস। বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবনের আরাধ্য ছিল জনগণের কল্যাণ। জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে তিনি প্রাণ দিয়েছেন। তানিয়া আমীর বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করা একটি দলিল। আজকে যারা বাহাত্তরের সংবিধান ছুঁড়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে, তারা পরাজিত শক্তি। সালতানাত বা খেলাফত তথা এক পরিবারের শাসনকেন্দ্রিক দলিল নয় আমাদের সংবিধান। যেখানে জনগণের অস্তিত্ব নেই, যে শাসন ব্যবস্থা পরিবারের ইচ্ছায় চলে, আমরা যুদ্ধ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছি।

‘ভয়েস ফর হিউম্যান ডিগনিটি’র আয়োজনে জাতীয় শোকদিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গত ১২ আগস্ট পূর্ব লন্ডনের মাইক্রোবিজনেস হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি। জাতির জনক। আমাদের স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরেপক্ষতা। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ স্তম্ভগুলো বা মূল্যবোধ অর্জন করেছে। তাকে কেউ চাইলেই মুছে ফেলতে পারবে না। এগুলো ৩০লক্ষ শহীদ ও ৪লক্ষ মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি, রক্ত দিয়ে কেনা। সংবিধানের বিভিন্ন অংশ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘোষণার দলিল ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অন্ধকার সময় কাটবেই, সংগ্রাম করেই এই অন্ধকার থেকে মুক্তি আনতে হবে। বাঙালির ইতিহাস সংগ্রমের ইতিহাস।






প্যালেন আলোচনায় আরো ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান, সাবেক প্রেস মিনস্টার আসিকুন নবী চৌধুরী, ব্যারিস্টার জয়নাল আবেদীন এবং কবি সাংবাদিক হামিদ মেহাম্মদ।
সভায় লিখিত বক্তব্য পেশ করেন আসিকুন নবী চৌধুরী ও্ হামিদ মোহাম্মদ। আসিকুন নবী স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের তিন প্রজন্মের বেড়ে ওঠা,তাদের দেশ জাতি সম্পর্কে ধারণা,ইতিহাস পাঠ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, একটি প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেছে, একটি প্রজন্ম, দেখেনি, আরেকটি প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাস দেখে ও পড়ে এখন দেশে বিদ্যমান। আমরা এই বিকৃত ইতিহাস থেকে নতুন প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
হামিদ মোহাম্মদ বঙ্গবন্ধু কিভাবে বঙ্গবন্ধু হলেন,কিভাবে বিশ্বনেতা হলেন, কিভাবে জাতির জনক হলেন তা বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কেউ মুছে দিতে পারবে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান তার বক্তব্যে ৬৯ এর গণ আন্দোলন,বঙ্গবন্ধৃর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসা, রেসকোর্স ময়দানে জনগনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি হওয়াসহ নানা সময়ে কাছ থেকে দেখা ও তাকে উপলদ্ধি করার বর্ণনা দেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান মোগল আমল থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশ, পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত সাংবিধানিক ধারার ঐতিহাসিক বর্ণনা দিয়ে বলেন, এই ভুখণ্ড নানাভাবে শাসিত হলেও, শাসনতন্ত্র বা সংবিধান কখনো পায়নি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে এক বছরের মাথায় একটি আধুনিক ও জননন্দিত সংবিধান পেয়েছিল। সেই সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলা কঠিন।কারণ এটা রক্তে অর্জিত।
ব্যারিস্টার জয়নাল আবেদীন সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে দেশ পেয়েছি,তা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
আলোচনা সভার প্রারম্ভে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার সাংবাদিক সুজাত মনসুর। তিনি তার বক্তব্যে সংগঠনটির জন্ম বৃত্তান্ত এবং মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্ঙ্গীকার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভা পরিচারনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা তৌহিদ ফিতরাত হোসেন ও সৈয়দ তামিম আহমেদ। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব উর্মি মাজহার,শিব্বির আহমেদ শুভ, ফয়েজ নূর, ও স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল, কবি ময়নূর রহমান বাবুল, কবি এ কে এম আবদুল্লাহ ও কবি জুয়েল রাজ।
উপস্থিত সুধীজনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভার সমাপ্তি বক্তব্য রাখেন রাজনীতিক সমাজকর্মী মো. হরমুজ আলী।
উল্লেখ্য, এ আলোচনা সভায় সুধীজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটির সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকসহ রাজনীতিক,শিক্ষক, সাংবাদিক , লেখক এবং সমাজকর্মী।