আজ ১৫ই আগস্ট—বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বেদনা ও শোকের দিন। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার বিষাদময় ঘটনার ৫০ বছর হলো আজ। গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি ইতিহাসের অন্যতম বর্বরতার শিকার বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও সকল শহিদকে।
১৯৭৫ সালে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড কেবল একজন মানুষকে শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশে ছিল না; এই হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য ছিল একটি জাতি, তার আদর্শ, তার স্বপ্ন, তার প্রত্যাশা ও তার সম্ভাবনাকে চিরতরে নির্মূল করা। মানুষের শারীরিক সত্ত্বাকে নিঃশেষ করার পরও সেই চিরজাগরুক স্বপ্নকে ধারণ করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটিকে যখন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন মানুষ বুঝে যায় বঙ্গবন্ধুর আত্মাকে বাঙালি জাতির মনন থেকে, ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার হীন অভিযান শেষ হয়নি। তার সাক্ষ্য দিচ্ছে, বুলডোজারের আঘাতে আঘাতে জর্জরিত ৩২ নম্বরের বুক। আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ক্ষত নিয়ে ওই বাড়ির বিদীর্ণ কাঠামো বাঙালি ও বাংলাদেশের ভয়াবহতম সংকটকালকে নির্দেশ করছে। আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ৫০ বছরের মাথায় বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে মুছতে ব্যর্থ শত্রুশিবির জড় কাঠামোকেও জর্জরিত করেছে। বঙ্গবন্ধু রচিত আদর্শের ভিত্তিকাঠামোর এই বাংলাদেশই তাদের শত্রু। সেই ১৯৫২ থেকে আজ অবধি সেই চক্রই ইতিহাসের সামনে আগুয়ান চাকা উল্টো করে দিতে চায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বিশ্বে সূচিত উপনিবেশবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের অন্যতম প্রধান অগ্রনায়ক। তার রাজনীতি ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদবিরোধী সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বুঝতেন—রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা রক্ষা ছাড়া একটি জাতি পূর্ণ স্বাধীন হতে পারে না। তাঁর দর্শন ছিল গ্রামভিত্তিক অর্থনীতি, স্বনির্ভর উৎপাদন এবং বিশ্বপরিসরে সমমর্যাদা অর্জনের জন্য দৃঢ় অবস্থান। বৈদেশিক চাপ, হুমকি বা প্রলোভনের কাছে তিনি কখনও নতিস্বীকার করেননি।
আজ, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরে, আমরা আবারও দেখতে পাচ্ছি—বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতিযোগিতা ও প্রভাবের মঞ্চে পরিণত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র, বৈদেশিক হস্তক্ষেপ ও অর্থনৈতিক শোষণের নতুন রূপ আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। যতদিন বাংলাদেশ রাষ্ট্র থাকবে, বাঙালি জাতি থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও আদর্শ পুনর্জাগ্রত হবে।
আমি বাংলাদেশের সকল নাগরিককে বলতে চাই, দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করতে চাই, ৩২ নম্বরের ধ্বংসস্তূপ থেকে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালির বিজয় নিশান আমরা আবার উড়াবো। উড়াবোই।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।আঁধার কেটে ভোর হোক বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।