
।।আফজাল হোসেন।।
চৌদ্দ দিন দেশে ছিলাম না। অসাধারণ মানুষ আর মানুষের নানা অসাধারণত্ব দেখে দেখে দিন কেটেছে। মুগ্ধ হয়েছি, আর মনে হয়েছে- চোখে যা যা দেখছি- সবকিছু মানুষেরই করা, মানুষের স্বপ্ন সাধনা ও বিশ্বাসের ফল। এসব আমাদের দেশেও ঘটা অসম্ভব ছিল না।
প্রশ্ন জেগেছে মনে, আমরা কী অযোগ্য, অক্ষম? আমরাও তো যুগে যুগে সুন্দর একটা দেশ হবে, আকাঙ্খা করেছি- তাহলে পাওয়া হয়নি কেনো?
বিদেশের আকাশের রং দেখেও মনে জেগে ওঠে দীর্ঘশ্বাস! এতো নীল আর এতো সাদার উচ্ছাস আমাদেরও একদিন ছিলো। কেনো আগের মতো নেই – সে প্রশ্নও জাগে। উত্তর পাই, সুজলা সুফলা, শস্য শ্যমলা- শুধু কবিতায় পড়িনি, নিজেদের চোখে দেখার সৌভাগ্যও হয়েছে অনেকেরই।
সকল সুন্দর যে মলিন হয়ে গেলো- তা কী এমনি এমনি? তার পিছনে আমাদের অর্থাৎ নিজেদের কি কোনো ভূমিকা নেই?
মানুষকে মানুষ বানায় মন। মনই একটা দেশের রূপদান করে। মানুষের মনে অফুরান প্রেম, মায়া মমতা, সৌন্দর্য থাকবার কথা- যদি সেসবের ঘাটতি থাকে, দেশ হবে দুঃখ কষ্টে ভোগা দেশ। তেমনই হবে দেশের মানুষের হাল।
মানুষের আচরণে প্রকৃতিও নীরবে বদলে যায়। নদী, সমুদ্র, পাহাড়, আকাশ- সবকিছুরই যেমন থাকবার কথা, তেমন থাকে না।
মানুষের মন শুধু মানুষেরই মধ্যে থাকে তা নয়- তা উড়ে ঘুরে বেড়ায়। পাখির মত গাছে গিয়ে বসে, নদীর স্রোতে গিয়ে মেশে, আকাশের নীলে গিয়ে মিশে আকাশকে বানায় আরো নীল। মনই রচনা করে সুন্দর এবং অসুন্দর।
পূর্ণিমাতে ছোটবেলাকার সেই স্নিগ্ধতা এখন আর নেই। চাঁদের বয়স বাড়ে না- তাহলে চাঁদ কেনো রূপ হারালো?
সুন্দরের প্রতি যদি উদাসীনতা থাকে, অসুন্দরের দখলে চলে যায় মন এবং মানুষ। তার উদাহরণ রয়েছে হাতের কাছেই। প্রায়ই আমরা দেখি, শুনতে পাই, পড়ে জানতে পারি- দেশপ্রেমের অজুহাতে রাতদিন এ ওকে আক্রমন, অপমান অসন্মান করে চলেছে। এই ক্ষোভ, ঘৃণা, বিভেদ সৃষ্টিকারী মনোভাব দেশের বা মানুষের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।
মন তো চিনিয়ে দেয়- এটা ভালো, ওটা মন্দ। জেনে শুনে এবং বুঝে মানুষ মন্দেরই লেজ ধরে আগে বাড়তে চায়। এমন আজগুবি স্বভাবের মানুষেরা বহুকাল ধরে কপালের দোষ দিয়ে আসছে। চুয়ান্ন বছর ধরে একটা ডোবার মধ্যে ব্যাঙের মতো একই ডাক ডেকে ডেকে একটা জাতি দুনিয়াদারী কাটিয়ে গেলো।