৫০ থেকে ৮০ বছর বয়সের যাঁরা দীর্ঘ সময় ধূমপান করেছেন, তাঁদের সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যানসার আগে শনাক্ত করা সম্ভব। যত আগে ক্যানসার ধরা পড়ে, চিকিৎসার সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ধূমপান শুধু ক্যানসার নয়, আরও অনেক রোগের কারণ। ধূমপানের কারণে সবচেয়ে বেশি হয় ফুসফুসের ক্যানসার। বিভিন্ন সূত্রে মানুষ তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে জানে। কিন্তু ধূমপান ছাড়ার পর শরীরে কী ঘটে এবং ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি কতটা কমে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে করা বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্যানসারের জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি ছাড়ার মাধ্যমে এই সব রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ধূমপান ছাড়ার পর শরীরের পরিবর্তন
ধূমপান ত্যাগ করলে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। ধূমপানের কারণে ফুসফুসের কোষে যে ধরনের ক্ষতি ও পরিবর্তন হয়, তা ধূমপান ছাড়ার পর থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করে।
ধূমপান বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসে ক্যানসারের ঝুঁকি কমতে শুরু করে এবং দীর্ঘ মেয়াদে এই ঝুঁকি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে ধূমপানের কত দিন এবং কত পরিমাণ ধূমপান করা হয়েছে তার ওপর। এ ক্ষেত্রে সিগারেট সম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
ধূমপানের ধোঁয়ায় ৭ হাজারের বেশি রাসায়নিক থাকে। এসব রাসায়নিকের অনেকগুলোই ক্যানসারের জন্য দায়ী। এই রাসায়নিকগুলো ফুসফুসের কোষকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি করে এবং জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য মতে, ধূমপান ছাড়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফুসফুসের ধমনি ও কোষগুলো ধীরে ধীরে নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে। শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা কমতে থাকে, ফুসফুসের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে বেড়ে যায় এবং শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে।
ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা
ধূমপান ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি ধাপে ধাপে কমতে শুরু করে। বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদে এর ফলাফল চোখে পড়ার মতো।
ধূমপান ছাড়ার পাঁচ বছর পর
ধূমপান ছাড়ার পাঁচ বছরের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে। ফুসফুসের কোষগুলোতে নতুন জিনগত পরিবর্তন ধীরে ধীরে কমে।
ধূমপান ছাড়ার দশ থেকে পনেরো বছর পর
ধূমপান ছাড়ার দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমে যায়। এই সময়ের মধ্যে ফুসফুসের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কোষ নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তবে যাঁরা দীর্ঘদিন বা অতিরিক্ত ধূমপান করেছেন, তাঁদের জন্য কিছু ঝুঁকি অবশিষ্ট থাকতে পারে।
অর্থাৎ, ধূমপান ত্যাগ করা শরীর দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যত আগে ধূমপান ছাড়বেন, শরীর তত দ্রুত নিজেকে পুনরুদ্ধার শুরু করবে।
ধূমপান ছাড়ার পর ফুসফুসের যত্ন
ধূমপান ছাড়াই যথেষ্ট নয়। ক্যানসারসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করতে হবে। তাই ধূমপান ত্যাগ করার পর ফুসফুসের সুস্থতা বজায় রাখতে আরও কিছু কাজ করা দরকার। সেগুলো হলো—
⦁ ফলমূল ও সবজি-জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
⦁ হাঁটা, সাঁতার, যোগব্যায়ামসহ অন্যান্য শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে।
⦁ দূষিত পরিবেশ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে দূরে থাকতে হবে।
⦁ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে থাকতে হবে, যাতে নিয়মিতভাবে ফুসফুসের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং সময়মতো যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়।
জীবনধারার পরিবর্তন ও মানসিক প্রস্তুতি
ধূমপান ছাড়ার সময় মাথাব্যথা, বিরক্তি, হতাশা, ঘুমের সমস্যা বা ওজন বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। এই সময় ধৈর্য ও সচেতনতা প্রয়োজন। ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, ধ্যান ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় সহায়তা করবে। জীবনের ছোট ছোট সাফল্য উদ্যাপন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দিন, প্রথম সপ্তাহ বা প্রথম মাস ধূমপান না করার পরে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। এটি হতে পারে প্রিয় খাবার, আইসক্রিম, স্পা ডে বা পছন্দের জিনিস কেনা।
ধূমপান ছাড়া সহজ নয়। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও ধৈর্য থাকলে এটি সম্ভব। ধূমপান ত্যাগ করা শুধু ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় না, শরীর সুস্থ রাখে, জীবন দীর্ঘায়িত করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। সূত্র: হেলথশট