।।আলমগীর শাহরিয়ার।।
মবসম্রাট হাসনাত গতকাল বলেছেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরে যাকে রাষ্ট্রপ্রধান (মূলত শব্দটা হবে সরকার প্রধান) বানানো হয়েছে উনি লন্ডনে গিয়ে সিজদা দিয়ে এসেছেন।” বলা বাহুল্য, এই সেজদা তারেক রহমান সমীপেষু। অথচ মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাস বলছে, সেজদা কেবল একমাত্র আল্লাহকে দেওয়া যায়। এর বাইরে কাউকে সেজদা দেওয়া শিরক। শিরক ক্ষমাহীন। গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপি আয়োজিত এই আলোচনায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, লন্ডনকে কেবলা বানিয়ে সিজদা দিয়ে নির্বাচনের ওহি এনেছেন প্রধান উপদেষ্ট।” তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা লন্ডনকে কেবলা বানিয়ে সিজদা দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, তাঁদের কেবলা পরিবর্তন করে জনগণের দিকে সিজদা দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।’
ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম কর্মে উদাসীন হলেও সৌদির বদলে ইউনূস সাহেবের কেবলা যে লন্ডন আমরা জানতাম না। হাসনাত-পাটওয়ারি মারফতে জানলাম। এতটুকু বলার পরে অনেক বিজ্ঞজন বলবেন এই কথাকে আক্ষরিক অর্থে নেবার কিছু নাই। কাব্যালঙ্কারের উপমা, উদাহরণ, রূপক হিসেবে দেখলেই পারেন। তা তো পারি।
কিন্তু ভাইয়েরা, এই সমান কথা লালমনিরহাটের পরেশ চন্দ্র শীল বললে, রংপুরের গঙ্গাচড়া, সুনামগঞ্জের শাল্লা, দোয়ারা বাজারের কোনো সংখ্যালঘু বললে, কুমিল্লার শিখা রাণী বললে, খুলনার উৎসব মণ্ডল বললে আপনাদের ধর্মানুভূ্তি সুনামীর মতো চ্যাগাইয়া ওঠে কেন একটু বলবেন? হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ এমন “কেবলা” ও “ওহি” নিয়ে কিছু বললে কিংবা না বললেও তাদের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে কিছু একটা লিখে দিলে প্রবল তৌহিদীনুভূতির জনতা তাদের বাড়িঘর, গ্রাম আস্ত রাখেন না কেন? তাহলে ধর্মানুভূতির তাশ ভিন্ন ধর্মের মানুষকে নিপীড়ন করার একটা বাঙ্গু সহি কৌশল মাত্র?
তৌহিদী জনতার কত শক্তি দেখি মবসম্রাট হাসনাত গংয়ের এমন বক্তব্যের বিরুদ্ধে এখন কিছু বলুক, বাদ জুম্মা একটা কর্মসূচি দিয়ে দেখাক তারা। দেখবেন অনুভূতির মহাসমুদ্র শুকিয়ে গেছে। গাজার জন্য মিছিল করতে বেরিয়ে যারা বাটার জুতা চুরির মিছিল শুরু করে দেয় তাদের কাছে মানুষ, ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি কিছুই নিরাপদ না। এজন্যই ধার্মিক হবার আগে মানুষ হওয়া জরুরি। মানুষের কাছে মানুষ নিরাপদ। বাংলায় ধর্মানুভূতির রাজনীতি ॥