।। আরিফ মঈনুদ্দিন।।
আগামী বছর শেখ মুজিবের ভক্ত আরো বেশি দেখবেন৷ তখন জুতা মারা কর্মসূচি দিলে লোকজনরে আপনার পাশে পাবেন না।
এর পরের বছর মুজিব ভক্ত আরো বাড়বে। তখন জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি দিলে লোকজন আপনারে নিয়ে হাসবে, আপনার চেনা-পরিচিত লোকজনই দেখবেন মুজিবভক্ত হয়ে গেছে।
এরপরের বছর মুজিবভক্ত আরো বাড়বে, মুজিবভক্তের সাথে আপনার চায়ের দোকানে তর্ক করতে হবে। আপনি হেরে যাবেন। তখন আপনি জুতা মারা কর্মসূচি ডাকলে লোকজন আপনারেই জুতা মারবে।
এটা আসলে মুজিবকে ভালোবাসার ব্যাপার না। এটা আওয়ামীলীগকে ফিরিয়ে আনতে চাওয়ার ব্যাপার। স্বাদে ফিরিয়ে আনতেছে এমনও না, নিরুপায় হয়ে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে।
৫ আগস্টের আগে দেশে আওয়ামীলীগ খুব কম ছিলো। যাঁরা ছিলো তাঁরা আওয়ামীলীগ করলেও আওয়ামীলীগকে ভালোবাসতো না। ৫ আগস্টের পর দেশে আওয়ামীলীগ বেড়েছে, অনেক নিরপেক্ষ লোক আওয়ামীলীগ হয়ে গেছে এবং তাঁরা লীগকে ভালোবাসতেছে।
আর্ট ও কালচারের লোকজন এবং লিভারেল সেকুলাররা আওয়ামীলীগকে ভয়ে সমীহ করতো, তেলবাজি করতো সুবিধা পাওয়ার জন্য, কিন্তু গোপনে ঠিকই গালিগালাজ করতো। ৫ আগস্ট তাঁরা খুশিই হইছিলো। কিন্তু তাঁরা লিটারেলি আওয়ামী লাভার হয়ে গেছে এখন। কারণ ৫ আগস্টের পর দেশে আর্ট কালচারকে স্পেস দেওয়া হয় নি। মনে হইছে দেশটা আসলে আফগানিস্তান হয়ে যাবে।
আমি এমন লোকজনকে জানি যাঁরা জুলাইয়ে ছাত্রদের সমর্থন দিয়েছিলো, টাকা দিয়েছিলো, এবং আন্দোলনেও গিয়েছিলো, এরকম লোক এখন জুলাইয়ের নাম শুনতে পারে না। নাক সিঁটকায়। হতাশ হয়ে রাগে দুঃখে জুলাইকে গালি দিতে চায়।
গতকাল অনেকেই ভয়ে মুজিব পিরিতি দেখাইতে পারে নাই। যাঁরা দেখাইতে চাইছে তাঁদের সংখ্যা অনেক। জয়া আহাসানরা আসলে মুজিব লাভার না। তাঁরা মূলত এখন আওয়ামীলীগ হয়ে গেছে। তাঁরা আওয়ামীলীগকে ফেরত আনতে চায়। কারণ তাঁরা মনে করতেছে এই দেশে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করতে হলে লীগ ছাড়া কোন বিকল্প নাই। এমনকি তাঁদের জীবনের নিরাপত্তাও নাই। এবং এই বিশ্বাসের কারণ ৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের আহাম্মকি, মববাজি ও ট্যাগিং।
৫ আগস্টের পর থেকে শুধু প্রতিহিংসার ট্যাগিং হয়েছে- এ নাস্তিক, ও শাতেম, ঐটা শাহবাগী, এটা মালাউন। এসব। আর্ট-কালচারের স্পেস সংকুচিত করে, সেকুলার লিবারেলদের বিরুদ্ধে পাইকারি ঘৃণা উস্কে দিয়ে একধরণের এক্সট্রিম কনজার্ভেটিভ আবহ সৃষ্টি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে তাচ্ছিল্য ও ঘৃণা প্রদর্শন এবং একাত্তর বিরোধীদের নাচন তো আছেই।
কোন কিছুর কোন উন্নয়ন হয় নি। যাঁরে দিয়ে যে কাজটা হবে তাঁরে সেই পদে বসাইতে হবে। না ও স্বৈরাচারের দোসর, এর সাথে ওর ছবি আছে, ও দালাল এসব বলে বলে যোগ্য লোকদের বাদ দিয়ে অযোগ্য নির্বোধ কনজার্ভেটিভদের বসাইছে সব জায়গায়।
ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে আওয়ামীলীগের সাথে ছবি থাকা লোকজনকে লীগের দোসর বলে মববাজি করে বাসা থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে থানায় তুলে দিছে। এরা সবাই মুক্তি পেয়ে বের হয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু মববাজির কারণে ঐ লোকগুলোর ফ্যামিলি, আত্মীয়-স্বজন যে ট্রমা পাইছে সেই ট্রমা জুলাইয়ের প্রতি বিরুদ্ধাচারণ তৈরি করছে।
জুলাইয়ের মিছিলগুলো আরেকবার দেখেন, রং মশাল হাতে ছেলেরা আছে, টি-শার্ট পড়া মেয়েরা আছে। এদেরকে আপনি এখন আর আমাদের কারো সাথে দেখবেন না।
ক্রমাগত মাজার ভাঙা, লালন আখড়া ভাঙা, লালন উৎসব হইতে না দেওয়া, গানের আসরে হামলা, নাটক বন্ধ করে দেওয়া, গায়ে হলুদে গান বাজনা করায় গায়ে হলুদ বন্ধ করে দেওয়া, বাসে করে গান বাজিয়ে যাওয়ার কারণে বাস আটকে রাখা, পর্যটন এলাকা থেকে মেয়ে টুরিস্টদের তুলে দেওয়া, পর্দা না করলে কান ধরে উঠবস করানো, মেহজাবিনকে শো-রুম উদ্বোধন করতে না দেওয়া। আরো অনেক বলা যায়। সব জায়গায় প্রো কনজার্ভেটিভ লোকজনের আস্ফালন।
ইভেন মমতাজকে গ্রেফতার করানোর পক্ষে আমি না। এরা পয়সার গায়কী ও নর্তকী। পয়সা দিয়ে আমি মমতাজকে জুলাইয়ের গান গাওয়াইতাম।
মনে হয় না সাদমান মুক্তাদির, প্রিন্স মাহমুদ, মানজুর মাতিনরা আর জুলাইকে ঔন করে।
উনাদের হারিয়ে আপনারা যাঁদের উপর ভরসা করে আগাচ্ছেন, উনারা খুব সহজে বেচা যায়। তাঁদের সেই ইতিহাস আছে।
জুলাই নিয়ে গান,কবিতা, গল্প, সিনেমা, পথনাটক, মূকাভিনয় হচ্ছে না কেন? কেমনে হবে? কারা করবে? পুরো দেশটাই মনে হয় যে আর্ট-কালচার বিরোধী।
ব্যক্তিস্বাধীনতাকে চাপিয়ে রাখা যায় না। মাথা যত দ্রুত খুলবে ততো ভালো। আর্ট-কাললচারের লোকজনকে এবং সেকুলার-লিভারেলদের স্পেস দিন। এই কাজটা করতে না পারলে আওয়ামীলীগ বাংলাদেশে ১০০% ফিরবে।