সারা দেশে আজ শোকপ্রকাশ যেন এক গর্হিত অপরাধ। গত ১৫ আগস্ট, স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতার মর্মান্তিক মৃত্যুর বার্ষিকীতে যারা শোক প্রকাশ করেছিল তাদের সবাইকে তাড়িয়ে বেড়ানো হচ্ছে, মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এবং কারাগারের অন্ধকারে ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে।
ইউনুসের ভয়াল থাবার নিচে আজ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো মাথা নত করে আছে। শিক্ষক, ছাত্র, ইমাম, নারী এমনকি রিক্সাওয়ালারাও আজ ইউনুসের অন্ধ আক্রোশের শিকার, তার প্রতিশোধের আগুনের অসহায় বলি। একদিন যা ছিল ঐক্য ও শোকের দিন, আজ তা পরিণত হয়েছে ভয়াল যুদ্ধক্ষেত্রে।
স্মৃতিচারণের অধিকার হারিয়েছে রাষ্ট্র
বছরের পর বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিবস পালিত হয়েছে প্রার্থনা, দোয়া, আত্মপোলদ্ধি, দান-খয়রাতের মাধ্যমে। মসজিদ-মন্দির-চার্চ-প্যাগোডায় দোয়া- প্রার্থনা হতো, পাড়া মহল্লায় ক্ষুধার্ত দরিদ্রদের জন্য এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতো সাধারণ মানুষ, আর স্মৃতিস্তম্ভে থাকতো স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কিন্তু ফ্যাসিস্ট অবৈধ ইউনুসের আমলে সে সব প্রথা-ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।
একটি অসাংবাধিনানিক নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে শোক প্রকাশকে অবৈধ ঘোষণা করেছে ইউনুস। আর যখন মানুষ তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে ভয়ের বিপরীতে বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে, তখন তাদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
মব সন্ত্রাস ও গণগ্রেফতার
ইউনুসের পোষা গুন্ডারা ঢাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বিনা মামলায় যাকে তাকে গ্রেফতারের কারণে মানুষের জীবনধারণ আজ কঠিন হয়ে পড়েছে। সারাদেশে ভাষ্কর্য ভাংচুর করা হচ্ছে, নামাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে, বাসা থেকে বের করে মানুষকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছে।
এই শোষণের কালে কেউ শোক প্রকাশ করাটাই বড় অপরাধ। ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই’ নাম নিয়ে আজ োকাহতদের ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ বানানো হচ্ছে
ইউনুসের লক্ষ্য একদম পরিষ্কার, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা, মনমতো ইতিহাস লেখা, এবং নিজেকে ‘নতুন স্বাধীনতার নায়ক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
হুমকি, প্রতিরোধ আর নৃশংস দমননীতি
১৫ আগস্টের আগে ইউনুসের প্রেসসচিব প্রকাশ্যে হুমকি দেয় এবং শোকসভা আয়োজন করতে নিষেধ করে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু মানুষ দমে যায়নি। তারা শ্রদ্ধা জানিয়েছে, দোয়া মাহফিল হয়েছে, স্মরণ করেছে।
এর জবাবে ইউনুস-সমর্থিত পুলিশ বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাতারাতি শিক্ষক, ইমাম, পেশাজীবী আর সমাজের নেতৃবৃন্দকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় – তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
অবৈধভাবে গ্রেফতার ও দমনের ঘটনা
কিশোরগঞ্জ, ১৫ আগস্ট: দুই শিক্ষক – সরওয়ার জাহান নাঈম (৪০) ও রাসেল শিকদার – গ্রেফতার হন শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর স্মরণে দোয়া করার কারণে।
🔗 https://dbcnews.tv/articles/148486
নোয়াখালী, ১৪ আগস্ট: এক ইমাম ও তার দুই সহযোগীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, কারণ তারা ছোট্ট একটি দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন।
🔗 https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/mzz58hh9yz
গোপালগঞ্জ, ১৫ আগস্ট: পাঁচজনকে ধরে নিয়ে মিথ্যা অভিযোগে আওয়ামী লীগ সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাদের “অপরাধ” ছিল গরিবদের মাঝে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ।
🔗 https://www.kalerkantho.com/…/countr…/2025/08/15/1563180
সাতক্ষীরা, ১৫ আগস্ট: ইতিহাস ও ত্যাগের প্রতীক বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র প্রকাশ্য দিবালোকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, আর মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে ভয়ে তাকিয়ে থাকে।
🔗 https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/odnr2w3j6m
অবরুদ্ধ এক জাতি
বাংলাদেশ আজ দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়াবহ সঙ্কটের মুখোমুখি। যখন জাতির পিতাকে স্মরণ করা হয় অপরাধ হিসেবে গণ্য, যখন দোয়া আর দান-খয়রাতের জবাব মেলে হাতকড়া আর কারাগারের অন্ধকুঠুরি দিয়ে – তখন প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্বই হয়ে পড়ে অবরুদ্ধ।
কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। কোনো শাসন, কোনো ফরমান, কোনো কারাগারের শিকলই সত্যকে জানা মানুষের আত্মাকে স্তব্ধ করতে পারে না।
১৫ আগস্ট ইউনুস দমনপীড়নের মাধ্যমে স্মৃতিকে চাপা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিটি গ্রেফতার হওয়া শিক্ষক, প্রতিটি স্তব্ধ হওয়া ইমাম, প্রতিটি ভাঙা দেয়ালচিত্রে – বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার আরও উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে ওঠে।