২১ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ভয়াবহ ও কলঙ্কিত দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নৃশংস ও নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সংগঠিত এই হত্যাযজ্ঞের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা। এই বর্বরোচিত হামলায় নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২২জন নেতাকর্মী শহীদ হন এবং পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেন। এই হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ করেছিল যে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তান ও তাদের দেশীয় এজেন্টরা জড়িত ছিল। একাত্তরের পরাজিত দেশি-বিদেশি শক্তিসমূহের সম্মিলিত উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি ভাবধারায় বাংলাদেশকে উগ্র-জঙ্গিবাদী ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠত করা এবং জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেদিন পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় আমাদের আশার দীপশিখা প্রজ্জ্বলিত ছিল। আওয়ামী লীগ সেই রক্তের ঋণকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও উন্নয়নের দর্শন সামনে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু অবৈধ দখলদার খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূস গংও সেই উগ্র-সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতিভূ হিসেবে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করছে।
সেই নারকীয় গ্রেনেড হামলার পর পরই বিএনপি-জামাত জোট সরকার সব আলামত নষ্ট করার অপচেষ্টা করেছিল; জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল। পরবর্তী তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পুনরায় তদন্ত হয় এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আদালত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ধরে ন্যায়বিচারের সব বিধি-বিধান মেনে এ মামলার বিচার সম্পন্ন করে। আদালত এ মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, অন্যতম পরিকল্পনাকারী তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জন পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু অসাংবিধানিক ও অবৈধ ইউনুস গং ক্ষমতা দখল করার পর তাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ প্রহসনমূলক রায়ে দণ্ডিত সকল অপরাধীদের খালাস দেয়। এটি জাতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত থাকবে এবং নৃশংস এই গ্রেনেড হামলা যতটা ঘৃণ্য খালাসের রায় ততটা কলঙ্কিত ঘটনা। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি অঙ্গীকার রেখে আজকের এই দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গভীর শ্রদ্ধার সাথে শহিদদের স্মরণ করছে এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে—চিরদিনের মতো ঘৃণিত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চিরশত্রু উগ্র-সাম্প্রদায়িক জঙ্গি ও তাদের প্রতিভূ বিএনপি-জামাত ও খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূস গংকে প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ হোন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছে, শহিদদের রক্ত ও ত্যাগকে শক্তি হিসেবে ধারণ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মানবতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে এবং প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও শান্তির পথে পুনরায় অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।