।। মৃণ্ময় সেন।।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান একটি অমোঘ সত্য। ফজলুর রহমান, বিএনপির একজন বর্ষীয়ান নেতা এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, যিনি গত এক বছরে তার বক্তৃতা ও সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, তাকে দলের পক্ষ থেকে কুশপুত্তলিকা দাহ ও ছবিতে জুতার আঘাতের মাধ্যমে অবমাননা করা হয়েছে। এই ঘটনা শুধু ফজলুর রহমানের ব্যক্তিগত অপমান নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও ইতিহাসের প্রতি বিএনপির ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
ফজলুর রহমান সম্ভবত বিএনপির একমাত্র নেতা ছিলেন, যার চিন্তা ও মননে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জীবন্ত ছিল। তিনি বারবার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার বা বিকৃত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার এই অবস্থান তাকে দলের মধ্যে একটি ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব করে তুলেছিল। কিন্তু বিএনপির সাম্প্রতিক পদক্ষেপ, যেমন পাকিস্তানের প্রতি ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে অবস্থান, ফজলুর রহমানের মতো একজন নেতার প্রতি এই অবমাননাকে অনিবার্য করে তুলেছে।
এটি বিএনপির ইতিহাসে নতুন নয়। অতীতে ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গেও অনুরূপ আচরণ করা হয়েছিল, যখন তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কথা বলেছিলেন।
আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপির সরকার গঠনের সম্ভাবনা যতই শক্তিশালী হচ্ছে, ততই দলটির মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অবস্থান এবং পাকিস্তানের প্রতি ঝোঁক স্পষ্ট হচ্ছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত বা অস্বীকার করার প্রবণতা বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক কৌশলের একটি অংশ বলে মনে হচ্ছে।
এটি কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল আদর্শের প্রতি একটি গভীর বিশ্বাসঘাতকতা। ফজলুর রহমানের অবমাননা বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তাদের ক্রমবর্ধমান বিমুখতার প্রতীক।
এই ঘটনা বাংলাদেশের জনগণের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরে: বিএনপি কি তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মূল্যবোধকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করতে প্রস্তুত? এই ধরনের পদক্ষেপ জাতির ঐতিহ্য ও পরিচয়ের প্রতি শুধু অবমাননাই নয়, বরং জাতীয় ঐক্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশের জনগণের উচিত এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
বিএনপির এই পদক্ষেপগুলো যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা তাদের নৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও ক্ষুণ্ন করবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। ফজলুর রহমানের অবমাননার মাধ্যমে বিএনপি যে পথে হাঁটছে, তা কেবল তাদের নিজেদের পতনের দিকে নিয়ে যাবে না, বরং বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য ও অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করবে।